স্বাস্থ্য

ভিটামিন ই ক্যাপসুল খাওয়ার উপকারিতা এবং খাওয়ার নিয়ম

আমাদের শরীরের বৃদ্ধির জন্য অনেক পুষ্টি উপাদান প্রয়োজন। এর মধ্যে ভিটামিন একটি গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান। আমাদের শরীর এর জন্য বিভিন্ন ধরনের ভিটামিনের প্রয়োজন হয়ে থাকে। যেমন: ভিটামিন এ, বি, বি৫, সি, ডি, ই, ইত্যাদি। আমরা সেসব ভিটামিন প্রাকৃতিক নানা উপাদান থেকে পেয়ে থাকি। আবার কখনো কখনো কোনো ভিটামিনের বেশি ঘাটতি দেখা দিলে ডাক্তার আমাদের মেডিসিন বা ক্যাপসুল প্রেসক্রাইব করে থাকেন। সেসব নিয়মিত সেবনেও শরীরে ভিটামিনের ঘাটতি পূরণ হয়। আজকে আমরা জানবো এরকমই এক গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন সম্পর্কে যা আমাদের শরীর, ত্বক ও চুলের জন্য অনেক কার্যকরী, সেটি হলো ভিটামিন ই।

ভিটামিন ই তে রয়েছে এন্টি অক্সিজেন যা আমাদের শরীরের ক্ষত শুকাতে এবং ত্বকের নানা ধরনের রোগের নিরাময়ে সাহায্য করে থাকে। দেহের বাহ্যিক সৌন্দর্য বৃদ্ধির পাশাপাশি শারীরিক ডেভেলপমেন্ট এ ও অসাধারণ ভূমিকা পালন করে।

ভিটামিন ই সমৃদ্ধ খাবার

  • সূর্যমুখীর বীজ এবং তেল।
  • সেলমন ফিস
  • কাজু বাদাম
  • এভোকাডো
  • লাল মিষ্টি মরিচ
  • আম
  • কিউই ফল
  • রাজহাঁসের মাংস
  • ব্রকলি
  • পালং শাক
  • অলিভ অয়েল

ভিটামিন ই ক্যাপসুল খাওয়ার উপকারিতা

ত্বক এবং শরীরের যত্নে ভিটামিন ই ক্যাপসুলঃ ত্বকের যত্নে ভিটামিন ই এর প্রভাব সম্পর্কে কম বেশি আমরা সবাই জানি। আমাদের ত্বকের উপরিভাগ নানা দূষণের স্বীকার হয়। এছাড়াও অনেকের হরমোনাল বা নানা শারীরিক সমস্যার কারণে শরীরে ভিটামিন ই এর ঘাটতি হয়ে থাকে। সেক্ষেত্রে আমাদের ভিটামিন ই সাপ্লিমেন্ট অথবা ভিটামিন ই জাতীয় খাবার খেতে হয়।

শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় ভিটামিন ই ক্যাপসুলঃ ভিটামিন ই তে বিদ্যমান এন্টি অক্সিজেন শরীরের ইমিউনিটি ব্যবস্থাকে ত্বরান্বিত করে। পাশাপাশি ত্বকে ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন রোধে সাহায্য করে। এসব আমাদের শরীরের ভিতরে এক শক্তিশালী এন্টিবডি তৈরি করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

বার্ধক্যের প্রভাব দূর করে ভিটামিন ই ক্যাপসুলঃ বয়স বাড়ার সাথে সাথে ত্বকে বলিরেখা পড়তে শুরু করে। চামড়া ঝুলে যায়। এসব দূর করতে ভিটামিন ই অনেক কার্যকরী। এটি ত্বকের কোষ পুর্নগঠনের মাধ্যমে বয়সের ছাপ কমাতে সাহায্য করে। ভিটামিন ই জাতীয় খাবার বা সাপ্লিমেন্ট গ্রহণের মাধ্যমে ত্বকের বলিরেখা দূর করে চামড়ায় টান টান ভাব আনা সম্ভব।

ব্রণের সমস্যা দূর করে ভিটামিন ই ক্যাপসুলঃ ব্রণ ত্বকের একটা প্রধান সমস্যা। ভিটামিন ই এই সমস্যা দূর করতে অনেক ভালো ভূমিকা রাখে। ত্বকে নানা জীবাণু জমে থাকার জন্যই ব্রণের সমস্যা দেখা দেয়। আমরা ইতোমধ্যে জেনেছি যে, ভিটামিন ই শরীরে ব্যাকটেরিয়া নিরসনে সাহায্য করে এবং এন্টিবডি তৈরি করে। তাই নিয়ম করে ভিটামিন ই সেবন করলে বা ত্বকের ব্রণে সরাসরি লাগালেও অনেক ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।

ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায় ভিটামিন ই ক্যাপসুলঃ ভিটামিন ই জাতীয় খাবার নিয়মিত গ্রহণের ফলে ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ে। ত্বকের লোমকূপ গুলো পরিষ্কার হয়ে ভিতর থেকে স্বাস্থ্যকর হয়ে উঠে। ত্বককে ব্যাকটেরিয়া ভাইরাস এর ইনফেকশন থেকে দূর করে, ফলে ত্বক হয়ে উঠে ব্রণমুক্ত এবং উজ্জ্বল।

ত্বকের শুষ্কতা দূর করে ভিটামিন ই ক্যাপসুলঃ ভিটামিন ই ত্বকের শুষ্কতা দূর করে। রাতে লোশনের সাথে অলিভ ওয়েল এবং ভিটামিন ই মিক্স করে দিলে ত্বক অনেক নরম এবং সুন্দর হয়ে উঠে। এমনকি ঠোঁটের শুষ্কতার জন্যও রাতে ভিটামিন ই লাগিয়ে ঘুমালে ঠোঁটের শুষ্কতা দূর হয়।

ত্বকের ট্যান দূর করে ভিটামিন ই ক্যাপসুলঃ সূর্যের আলোতে যাওয়ার ২০ মিনিট আগে সানস্ক্রিন অথবা ময়েশ্চারাইজার এর সাথে ভিটামিন ই ক্যাপসুল এর তেল মিশিয়ে লাগালে সানবার্ন হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়।

ডার্ক সার্কেল দূর করে ভিটামিন ই ক্যাপসুলঃ রাতে সজাগ থাকলেই অনেকের ডার্ক সার্কেল পড়ে যায়। আবার অনেকের শারীরিক সমস্যা বা বয়সের জন্যও ডার্ক সার্কেল পড়তে পারে। অনেক মহিলারা এগুলো নিয়ে বিব্রত হন এবং মেকাপ ছাড়া বের হতে চান না বাসা থেকে। তাদের জন্য ভিটামিন ই ব্যবহার হতে পারে এক দারুন সমাধান। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে ভিটামিন ই যেকোনো ময়েশ্চারাইজার এর সাথে মিক্স করে লাগিয়ে নিন। এর নিয়মিত ব্যবহার এ ত্বকের অন্যান্য সমস্যা গুলো ও কম হতে থাকবে।

নখের সৌন্দর্য বর্ধন করে ভিটামিন ই ক্যাপসুলঃ নানাবিধ হরমোনাল কারণে নখ অনেকসময় নষ্ট হয়ে যায়। অর্থাৎ নখের আকৃতি বিকৃত হয়। এসব অনেক সময় ভিটামিন ই এর কারণে ও হয়ে থাকে। তখন ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী, ভিটামিন ই ক্যাপসুল সেবন করলে অনেক ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।

চুলের সৌন্দর্যে ভিটামিন ই ক্যাপসুলঃ ভিটামিন ই ক্যাপসুল আপনার চুলকে করে লম্বা, ঘন, মজবুত এবং চকচকে । ক্যাস্টর অয়েলের সাথে ১ চা চামচ ভিটামিন ই ক্যাপসুল যোগ করুন। এটি চুলের গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত লাগান, এটি আপনার শুষ্ক চুলকে পুনরুজ্জীবিত করবে এবং পাতলা এবং বিভক্ত প্রান্ত থেকে মুক্তি পাবে।

ফাটা ঠোঁটের জন্য ভিটামিন ই ক্যাপসুলঃ ভিটামিন ই ক্যাপসুল শুষ্ক এবং ফাটা ঠোঁট নরম করে তোলে। আধা চা চামচ লেবুর রস নিন এবং এতে 2-3 ফোঁটা ভিটামিন ই তেল যোগ করুন। রাতে ঘুমানোর আগে এটি আপনার ঠোঁটে লাগান। পেট্রোলিয়াম জেলিতে ভিটামিন ই তেল মিশিয়ে শুকনো ও ফাটা ঠোঁটেও লাগালে ভালো ফলাফল পাবেন।

রোদে পোড়া থেকে রক্ষা করে ভিটামিন ই ক্যাপসুলঃ ভিটামিন ই একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা ত্বককে সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে রক্ষা করে। ক্ষত এবং দাগ সারাতে ভিটামিন ই যুক্ত ক্রিমও প্রয়োগ করা হয়। বেশিরভাগ বিউটি ক্রিমে ভিটামিন ই থাকে। রোদে পোড়া হলে মুখে ভিটামিন ই তেল লাগান।

অ্যান্টি রিঙ্কেল ক্রিম হল ভিটামিন ই ক্যাপসুলঃ আপনি যদি আপনার মুখের বলিরেখা এবং সূক্ষ্ম রেখা লুকাতে চান, তাহলে ভিটামিন ই তেল ব্যবহার করুন। এটি অ্যান্টি-এজিং ক্রিম হিসেবে কাজ করে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের সাথে লোড হচ্ছে, রক্ত ​​​​সঞ্চালন বাড়ায়। ত্বকে ভিটামিন ই তেল ম্যাসাজ করুন।

ত্বকের ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ক ভিটামিন ই ক্যাপসুলঃ ভিটামিন ই যুক্ত খাবার গ্রহণ করলে ত্বকের ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি কম থাকে।

চুলকানি প্রশমিত করে ভিটামিন ই ক্যাপসুলঃ ভিটামিন ই এটোপিক ডার্মাটাইটিসের সাথে যুক্ত শুষ্কতা, চুলকানি, একজিমা কমায়। মৌখিক ভিটামিন ই সম্পূরকগুলো একজিমার লক্ষণগুলোকে উন্নত করে।

ভিটামিন ই ক্যাপসুল ব্যবহারের নিয়ম

ভিটামিন ই ত্বকে ব্যবহার এর কিছু উপায় নিম্নে দেয়া হলোঃ

1. ত্বকে অ্যালোভেরা জেল এর সাথে ভিটামিন ই ক্যাপসুল ব্যবহার করার উপায়ঃ

অ্যালোভেরা জেল ড্রাই স্কিনের জন শুষ্ক ত্বকের জন্য অনেক ভালো। এর পাশাপাশি ভিটামিন ই ক্যাপসুলে থাকা তেল ত্বকের জন্য অনেক ভালো। কিন্তু এই মিশ্রণ শুষ্ক ত্বকের মানুষের জন্য বেশি কার্যকরী। যারা তৈলাক্ত ত্বকের অধিকারী, তারা এই মিশ্রণ ব্যবহার করতে গেল অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যাতে মিশ্রন সমপরিমাণে হয়। যদি অ্যালোভেরা জেলের সাথে ভিটামিন ই এর পরিমান একটু বেশি পড়ে যায় তাহলে ত্বকে ব্রণ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি বেড়ে যায়।

2. ময়েশ্চারাইজার এবং লোশনের সাথে ভিটামিন ই ব্যবহার করলে ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ে এবং ত্বকের শুষ্কতা দূর হয়।

3. বিভিন্ন ফেইসপ্যাক, ফেইসমাস্ক এর সাথেও ভিটামিন ই ব্যবহার করা যায়। এর আগে ত্বকে স্ক্রাব করে নিলে ভালো উপকার পাওয়া সম্ভব।

4. ফেসিয়াল ওয়েলের সাথেও ভিটামিন ই যোগ করে ত্বকে ব্যবহার করা যায়।এতে ত্বকের বলিরেখা দূর হয় এবং ত্বকে টান টান ভাব আসে।

ভিটামিন ই ক্যাপসুল চুলে ব্যবহারের নিয়ম

চুলের যত্নে ভিটামিন ই এর তুলনাই হয়না। চুল পড়া, চুলে খুশকি, চুলের স্কাল্পের সব ধরনের সমস্যার সমাধানে ভিটামিন ই অনেক কার্যকরী। এটি চুলের সব ধরনের সমস্যা দূর করার পাশাপাশি চুলকে ঘন, মজবুত, প্রানবন্ত করতে অনেক ভূমিকা পালন করে।

1. নারিকেল তেল, বাদাম তেল বা যেকোনো চুলের জন্য ব্যবহারকৃত তেলের সাথে ভিটামিন ই ক্যাপসুল যোগ করে মাথার ত্বকে ম্যসাজ করলে চুলের গোড়া অনেক মজবুত হয় এবং চুল সুন্দর হয়।

2. চুলের খুশকি দূর করতে অনেকে লেবু ব্যবহার করেন। এতে করে স্কাল্প ড্রাই হয়ে যাবার একটা সম্ভাবনা থাকে,সেক্ষেত্রে ভিটামিন ই ব্যবহারে চুলের ত্বকের ময়েশ্চার ব্যালেন্স হয়।

3. এছাড়াও চুল সুন্দর করার জন্য এবং চুলের যত্নে নারী-পুরুষ উভয়ই মাঝে মাঝে ভিটামিন ই এর তেলের ম্যাসেজ করা নিতে পারেন।

ভিটামিন ই ক্যাপসুল এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

ভিটামিন ই এর উপকারিতা সম্পর্কে আমরা সবাই জানি। কিন্তু আমাদের দেশের বেশিরভাগ মানুষই এমন ধারণা রয়েছে যে, ত্বকে এবং শরীরে যেকোনো সমস্যা দেখা দিলেই তা ভিটামিন ই এর অভাবের কারণে হতে পারে। এছাড়াও তারা ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়াই ভিটামিন ই মাসের পর মাস খেতে থাকেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তারা ভিটামিন ই খাওয়ার সঠিক নিয়ম-কানুন গুলো সম্পর্কে ও অবগত থাকেন না। এসবের কারণে ভিটামিন ই আপনার শরীরে যতটুকু উপকার করতে পারতো তার থেকে অনেক বেশি অপকার করে ফেলে। তাই আপনার ত্বকের বা শরীরের কোথাও কোন ক্ষত বা চামড়ায় কোন সমস্যা হলে সবার আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন। এসব সমস্যা ভিটামিন ই এর অভাবে হয়েছে নাকি অন্যান্য শারীরিক জটিলতার দরুন হয়েছে তা জেনে নিন। ডাক্তার আপনাকে যেভাবে ভিটামিন ই ক্যাপসুল বা সাপ্লিমেন্ট খেতে পরামর্শ দিবেন সে নিয়ম অনুযায়ী সেবন করবেন। পাশাপাশি ভিটামিন ই সমৃদ্ধ খাবার নিয়ম করে খেলেও ত্বকের এবং শরীরের অনেক ঘাটতি পূরণ করা সম্ভব।

আরো পড়ুনঃ

5/5 - (6 votes)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button