ভিটামিন ডি যুক্ত খাবার এর তালিকা
আধুনিক যুগে আমরা এতটাই ব্যস্ত হয়ে পড়েছি যে আমরা আমাদের শরীর ও স্বাস্থ্যের প্রতি মনোযোগ দিতে পারছি না। সুস্বাস্থ্যের জন্য আমাদের শরীরে প্রোটিন, ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিনের প্রয়োজন। এ জন্য ভিটামিন ও মিনারেল সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া উচিত। অনেক ধরনের প্রয়োজনীয় ভিটামিনের মধ্যে ভিটামিন ডি প্রধান।
আজকের পোস্টে আমরা ভিটামিন ডি-এর অভাবে যেসব রোগ, লক্ষণ, তার কারণ ও চিকিৎসা সম্পর্কে আলোচনা করব। সেইসংগে ভিটামিন ডি যুক্ত খাবার এর সম্পূর্ণ তালিকা এবং কিভাবে আপনার প্রতিদিনের ডায়েটে অন্তর্ভুক্ত করবেন তা আলোচনা করব।
Contents
ভিটামিন ডি কেন গুরুত্বপূর্ণ?
ভিটামিন ডি আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখে এবং হাড়কে শক্তিশালী করে। এটি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে এবং ক্যান্সারের মত রোগের সাথে লড়াই করতে সাহায্য করে।
ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি মেটানোর জন্য মেডিক্যাল স্টোরে কিছু ক্যাপসুল পাওয়া যায়, যা খেয়ে আমরা আমাদের শরীরে ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি পূরণ করতে পারি। তবে এই ক্যাপসুলগুলি খাওয়ার আগে একজন ডাক্তারের পরামর্শ প্রয়োজন।
ভিটামিন ডি এর প্রকারভেদ-
১) ভিটামিন ডি 2 (এগ্রো ক্যালসি ফেরোল)- ভিটামিন ডি ২ প্রাণীদেহে নেই। এই ভিটামিন উদ্ভিদ থেকে পাওয়া যায়। সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির উপস্থিতিতে গাছপালা এই ভিটামিন তৈরি করে।
২) ভিটামিন ডি-৩– এই ভিটামিন প্রাণীদেহে তৈরি হয়। এটি সূর্যের রশ্মির প্রতিক্রিয়া দ্বারা মানুষের শরীরে উৎপাদিত হয়। মাছ খেলেও আমরা এই ভিটামিন পেতে পারি।
ভিটামিন ডি এর অভাবের লক্ষণ-
- রক্তচাপ (উচ্চ রক্তচাপ)
- ক্লান্তি বোধ করা
- জয়েন্ট এবং হাড় ব্যথা
- শরীরে বলিরেখা
- বিষণ্নতা এবং চাপ অনুভব
- পেশী দুর্বল হওয়া
- ডায়াবেটিস
- ক্যান্সারের ঝুঁকি
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়া
- শিশুদের রিকেট রোগ
- হাড় নরম হওয়া
ভিটামিন ডি এর অভাব হলে কি হয়?
ভিটামিন ডি-এর অভাবে আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হতে শুরু করে এবং আমরা খুব দ্রুত ক্লান্ত হয়ে পড়ি। আমাদের শরীর খুব দুর্বল বোধ করতে শুরু করে। এর ফলে আমরা দ্রুত অসুস্থ হতে শুরু করি এবং শরীরের হাড় ও দাঁতে ব্যথা দেখা দেয়।
কাদের ভিটামিন ডি এর অভাব হয়?
ভিটামিন ডি এর ঘাটতি সাধারণত একটি পুষ্টির ঘাটতি যা প্রায় ৩০% ব্যক্তির মধ্যে দেখা যায়।
- এটি সাধারণত শিশু এবং প্রাপ্তবয়স্ক উভয় মানুষের মধ্যে ঘটে।
- এটি এমন মানুষদের মধ্যে বেশি দেখা যায় যারা বেশিরভাগই বন্ধ ঘরে থাকে।
- এছাড়াও যারা দুধ, দই, মাখন, ঘি ইত্যাদি দুগ্ধজাত দ্রব্য খান না তাদের মধ্যেও ভিটামিন ডি-এর অভাব দেখা যায়।
- যারা ফাস্ট ফুড বা জাঙ্ক ফুড যেমন পিৎজা, বার্গার এবং বাইরের আইটেমগুলি বেশি গ্রহণ করে।
- যারা অসুস্থতার কারণে বাইরে বেরোতে পারছেন না বা যারা নাইট শিফট ডিউটি করেন তাদের মধ্যেও ভিটামিন ডি-এর অভাব দেখা দেয়।
- এর সাথে, গর্ভবতী মহিলা এবং নিরামিষভোজীদের শরীরে ভিটামিন ডি-এর অভাব দেখা যায়।
ভিটামিন ডি যুক্ত খাবার
আমরা বিভিন্ন খাবার থেকে ভিটামিন ডি পেতে পারি। ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি পূরণ করতে আমরা আমাদের খাদ্য তালিকায় এই জিনিসগুলি অন্তর্ভুক্ত করতে পারি-
১। ডিম– ডিমের কুসুমে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ডি পাওয়া যায়, তাই আমাদের ডিম খাওয়া উচিত।
২। দুধ– দুধে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন ডি পাওয়া যায়। গরুর দুধ, মহিষ দুধের চেয়ে বেশি পুষ্টিকর।
৩। মাশরুম – অনেকেই মাশরুম একেবারেই পছন্দ করেন না তবে এটি উপকারী। কারণ, এটি ভিটামিন বি১, বি২, বি৫, ভিটামিন সি এবং ভিটামিন ডি এর একটি ভালো উৎস। শীত মৌসুমে বাজারে এটি সহজেই পাওয়া যায়।
৪। দই– আমাদের প্রতিদিন দই খাওয়া উচিত। এটা আমাদের শরীরের জন্য উপকারী। এটি শুধু ভিটামিন ডি এবং ক্যালসিয়ামই দেয় না, এটি হজমেও সাহায্য করে।
৫। মাছ -যারা আমিষ খান তারা তাদের খাদ্য তালিকায় মাছ অন্তর্ভুক্ত করে ভিটামিন ডি পেতে পারেন। এতে ভিটামিন এ এবং ভিটামিন বি 12ও রয়েছে।
৬। কমলা – যদিও কমলা ভিটামিন সি এর উৎস, কিন্তু কমলা খেলে আমরা পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন ডিও পাই। তাই আমাদের খাদ্যতালিকায় কমলালেবু অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।
৭। গোটা শস্য– মুগ, ছোলা, গম ইত্যাদিতে ভিটামিন ডি পাওয়া যায়। এগুলো সারারাত ভিজিয়ে রেখে সকালে খেতে হয়।
৮। ওটস – ওটসে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন ডি এবং ফাইবার পাওয়া যায়। এটি আমাদের খাওয়া খাবার হজম করতে সাহায্য করে।
৯। মাংস – মাংসে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ডি পাওয়া যায়।
১০। রোদ- সকালের সূর্যের আলো আমাদের শরীরের জন্য উপকারী। আমাদের প্রায় আধঘণ্টা রোদে বসে থাকা উচিত যাতে আমাদের শরীর সূর্যের আলো পায় এবং ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি পূরণ হয়।
যদিও সূর্যের রশ্মিতে ভিটামিন ডি পাওয়া যায়, তবে এটির অতিরিক্ত এক্সপোজার সানবার্ন এবং ট্যানিংয়ের মতো সমস্যা তৈরি করতে পারে। অতএব, সকালে অল্প সময়ের জন্য সূর্যের রশ্মির সংস্পর্শে আসতে হবে।
আরো পড়ুনঃ ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবার গুলো কি কি, আয়রন যুক্ত খাবার এর তালিকা
ভিটামিন ডি এর অভাব দূর করার উপায়
ভিটামিন ডি-এর অভাব দূর করতে আপনার জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনতে হবে।
আমাদের প্রত্যেকের প্রতিদিন ৬০-১০০০ আইইউ ভিটামিন ডি গ্রহণ করা উচিত। এর ফলে আমাদের শরীর সুস্থ থাকবে।
ভিটামিন ডি-এর অভাবের চিকিৎসা নির্ভর করে এর লক্ষণগু্লোর উপর। রোগ নির্ণয়ের পর একজন ব্যক্তির শরীরে ভিটামিন ডি-এর মাত্রা সম্পর্কে জানা যায়। এর ভিত্তিতে ডাক্তার চিকিত্সার প্রক্রিয়া শুরু করেন।
ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
মাছ, পালং শাক, পনির, সয়াবিন খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।
কখনও কখনও ভিটামিন ডি এর অতিরিক্ত অভাবের কারণে ক্ষতি হয় যেমন হাড় দুর্বল হয়ে যাওয়া, হাড় ভেঙে যাওয়া ইত্যাদি। এই সমস্যা সনাক্ত করার জন্য শরীরে ভিটামিন ডি এর পরিমাণ পরীক্ষা করা উচিত।
প্যারাথাইরয়েড গ্রন্থির কার্যকারিতা নিরীক্ষণের জন্য ভিটামিন ডি পরীক্ষা প্রয়োজনীয়।
যখন একজন ব্যক্তি পুষ্টির ঘাটতিতে ভুগেন তখন ভিটামিন ডি পরীক্ষা করা আরও গুরুত্বপূর্ণ ।
ভিটামিন ডি এর অভাবের ঝুঁকি কাদের বেশি?
- যাদের বাইপাস সার্জারি আছে তাদের ঝুঁকি বেশি।
- ৫ বছরের কম বয়সী শিশুরা বেশি ঝুঁকিতে থাকে।
- স্থূলতায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের ঝুঁকি বেশি।
- যারা ধূমপান করেন তাদের ঝুঁকি বেশি।
- টিভি রোগীদের ঝুঁকি আছে।
- ক্যান্সার রোগী।
- বয়স্কদের মধ্যে।
আরো পড়ুনঃ ওজন কমানোর খাবার তালিকা, স্বাভাবিক নিয়মে ওজন কমানোর উপায়, ওজন কমাতে আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়ার নিয়ম
শরীরে ভিটামিন ডি এর পরিমাণ কিভাবে পরীক্ষা করা হয়?
ভিটামিন ডি পরীক্ষা করার জন্য মানবদেহ থেকে অল্প পরিমাণ রক্ত নেওয়া হয়। এই রক্ত নেওয়ার জন্য শরীরের ওই অংশে একটি ব্যান্ডেজ বা ব্যান্ড বেঁধে দেওয়া হয়, যা শরীরের ভিতরের শিরায় রক্ত পড়া বন্ধ করে এবং শিরাগুলো স্পষ্ট দেখা যায়। সেই জায়গা থেকে সিরিঞ্জ দিয়ে রক্ত নেওয়া হয়।
যে ইনজেকশনে রক্ত সংগ্রহ করা হয় তার সাথে একটি শিশি সংযুক্ত থাকে। শিশুদের ক্ষেত্রে, এই রক্ত শিশুর আঙুল থেকে নেওয়া হয়। যেখানে রক্ত টানা হয় সেখানে একটি ব্যান্ডেজ স্থাপন করা হয়। অনেক সময় যে জায়গা থেকে রক্ত নেওয়া হয় সেই জায়গার চিহ্ন নীল বা কালো হয়ে যায়।
আরো পড়ুনঃ
খুব সুন্দর ও দরকারি একটি পোস্ট
ধন্যবাদ। এরকম আরো লেখা পেতে আমাদের ওয়েবসাইট নিয়মিত ফলো করুন।