স্বাস্থ্য

চুলকানি দূর করার উপায়

5/5 - (14 votes)

সাধারণত যাদের ত্বক খুব শুষ্ক তাদের প্রায়ই চুলকানির সমস্যা হয়। কখনও কখনও বিভিন্ন ইনফেকশন ও ব্যাকটেরিয়ার কারণে চুলকানি হতে পারে।

চুলকানি হল ত্বকের একটি জ্বালাপোড়ার সমস্যা। বার্ধক্যের সাথে সাথে ত্বক আলগা ও পাতলা হয়ে যায় এবং ত্বকের আর্দ্রতা কমতে শুরু করে। ফলে ত্বক শুষ্ক হয়ে যায় এবং এতে চুলকানি হয়। যার কারণে ত্বকে ফোলা ও ফোসকা হয়।

ত্বকের চুলকানির ধরন

সাধারণত চার ধরনের চুলকানি হয় যা মানুষের ত্বককে প্রভাবিত করে। যেমন-

নিউরোজেনিক: কিডনি, লিভার, ব্লাড এবং ক্যান্সারের মতো রোগের কারণে এই ধরনের চুলকানি হয়। এটি শুধুমাত্র ত্বক নয় শরীরের অন্যান্য অংশকেও প্রভাবিত করে। মূলত নিউরোজেনিক চুলকানি কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

সাইকোজেনিক: এই ধরনের চুলকানি আসলে কম হয়, কিন্তু ব্যক্তি শুধু অনুভব করেন যে তিনি বারবার চুলকাচ্ছেন। এর কারণে তার ত্বকে আঁচড় দেওয়ার তাড়না বেড়ে যায়। এটি সাধারণত বিষণ্নতা, উদ্বেগ এর কারণে হয়ে থাকে।

নিউরোপ্যাথিক: এই চুলকানি, ব্যথার সাথে হতে পারে যা স্নায়ুতন্ত্রের সাথে সম্পর্কিত বলে মনে করা হয়।

প্রুরিটসেপ্টিক: বার্ধক্যজনিত কারণে বা ত্বকের কোনো ধরনের সংক্রমণের কারণে এই চুলকানি হয়। এই ধরনের চুলকানি প্রদাহ বা ত্বকের যেকোনো ধরনের ক্ষতির কারণে হতে পারে। এর জন্য চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হয়।

চুলকানির কারণ, উপসর্গ বা লক্ষণ

চুলকানির আলাদা কোনো লক্ষণ নেই। তবে, আপনার ত্বক যদি শুষ্ক থাকে তাহলে চুলকানির সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

চুলকানির কারণ

  • চুলকানির অনেক কারণ রয়েছে যার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রথম কারণ হল শুষ্ক ত্বক। শুষ্ক ত্বক সোরিয়াসিসের কারণেও হতে পারে।
  • এ ছাড়া একজিমা, চিকেন পক্স, আমবাত, খোসপাঁচড়ার মতো রোগেও চুলকানি হয়।
  • কিডনি ও লিভারের রোগ, রক্তস্বল্পতা, থাইরয়েড এবং ক্যান্সারের মতো গুরুতর রোগেও চুলকানি হয়।
  • কখনও কখনও কিছু জিনিস এবং পণ্যে অ্যালার্জি থাকে এবং এই এলার্জি চুলকানির আকারে আসে।
  • কিছু ওষুধের কারণেও চুলকানি হয়।
  • গর্ভাবস্থায় অনেক মহিলার চুলকানির সমস্যাও থাকে, বিশেষ করে পেট ও উরুতে।

চুলকানি পরীক্ষা – চুলকানির রোগ নির্ণয়

স্ক্যাবিসের চিকিৎসার সময়, ডাক্তার আপনাকে অনেক প্রশ্ন করতে পারেন। আপনাকে ডাক্তারের জিজ্ঞাসা করা সমস্ত প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে হবে যাতে তিনি আপনাকে সঠিক ওষুধের পাশাপাশি সঠিক খাবার ও পানীয় সম্পর্কে বলতে পারেন। এই প্রশ্নগুলির মধ্যে রয়েছে-

  • কতদিন ধরে চুলকাচ্ছেন?
  • এটা কি খুব জ্বালা সৃষ্টি করে?
  • এটা কি সব সময় ঘটে নাকি নির্দিষ্ট সময়ে ঘটে?
  • আপনার কি কোন এলার্জি আছে?
  • আপনি এর জন্য কোন ওষুধ খেয়েছেন?

অনেক সময় ডাক্তার আপনাকে এর জন্য কিছু পরীক্ষা করতেও বলতে পারেন। এই পরীক্ষাগুলোর মধ্যে রয়েছে- রক্ত ​​পরীক্ষা, থাইরয়েড, লিভার এবং কিডনি পরীক্ষা, ত্বক পরীক্ষা, বায়োপসি ইত্যাদি।

চুলকানির চিকিৎসা

বিভিন্ন ধরণের চুলকানির জন্য বিভিন্ন চিকিৎসা রয়েছে। যেমন-

কখনও কখনও চুলকানির কারণে ত্বকে ফুসকুড়ি হয় এবং ত্বক লাল হয়ে যায়। এমন পরিস্থিতিতে ডাক্তার একটি মলম সুপারিশ করতে পারেন। মলমের সাথে কর্টিকোস্টেরয়েড ক্রিম দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। এটি লাগানোর পরে, ভেজা ব্যান্ডেজ উপরে রাখতে হয়, যা চুলকানির জন্য খুব আরামদায়ক।

যদি বিষণ্নতা বা দুশ্চিন্তার কারণে চুলকানি হয়, তাহলে এন্টিডিপ্রেসেন্টস এতে সাহায্য করে। মেডিটেশন, যোগব্যায়াম, আকুপাংচারও মানসিক চাপ ও উদ্বেগ থেকে মুক্তি দেয় এবং ফলস্বরূপ চুলকানিও দূর হয়। যদি চুলকানির কারণ অন্য কোনো গুরুতর রোগ হয় তাহলে সেই রোগেও চুলকানি কমতে শুরু করে।

চুলকানি দূর করার ঘরোয়া উপায়

চুলকানি অনেক সময় ঘরোয়া প্রতিকার দিয়েও নিরাময় করা যায়। চুলকানির জন্য ঘরোয়া প্রতিকার খুবই উপকারী, যা আপনি অবশ্যই চেষ্টা করে দেখুন।

১। এলোভেরা: এলোভেরায় রয়েছে অ্যান্টি-এজিং প্রপার্টি সমৃদ্ধ ময়েশ্চারাইজার, যা চুলকানিতে উপকারী। শুষ্ক ত্বকে এটি খুবই উপকারী। চুলকানিতে ত্বক শুষ্ক হয়ে গেলে এটি জাদুকরী কাজ করে।

ব্যবহার- আপনার বাড়িতে যদি অ্যালোভেরার গাছ থাকে তবে এর একটি ডাল ভেঙে খোসা ছাড়ুন।
এবার সেখান থেকে বেরিয়ে আসা জেলটি সরাসরি আক্রান্ত স্থানে লাগান।
আপনি প্রতিদিন এটি করতে পারেন, আপনার চুলকানি কয়েক দিনের মধ্যে চলে যাবে।

২। চুলকানি উপশমে গিলয়ঃ গিলয় এমন একটি উদ্ভিদ, যা অনেক রোগে আশ্চর্যজনকভাবে ইতিবাচক ফল নিয়ে আসে। যদি আপনি চুলকানির সমস্যায় পড়ে থাকেন তবে গিলয় এর ব্যবহার উপকারী হবে। এটি রক্তকে বিশুদ্ধ করে এবং ত্বককে উজ্জ্বল করে

ব্যবহার-

  • সর্বোত্তম উপায় হল গিলয়ের রস বিশুদ্ধ আকারে খাওয়া।
  • এর জন্য আপনি গিলয়ের কিছু পাতা নিয়ে মিক্সারে পিষে রস তৈরি করুন।
  • এর সঙ্গে নিম ও আমলার রস নিলে কেকের ওপর আইসিংয়ের মতো কাজ করবে।
  • আপনার চুলকানি দূর হবে এবং ত্বকও উজ্জ্বল হবে।

৩। বেকিং সোডাঃ বেকিং সোডা আসলে সোডিয়াম বাইকার্বোনেট যা চুলকানি দূর করে। এছাড়াও এতে অ্যান্টি-ফাঙ্গাল বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা সংক্রমণ দূর করে।

ব্যবহার-

  • গোসল করার সময় একটি বড় টবে আধা কাপ বেকিং সোডা দিন।
  • এবার এতে ১৫-২০ মিনিট বসুন।
  • টব থেকে বের হয়ে সাধারণ পানি দিয়ে গোসল করুন।

৪। দশাং ভেষজঃ দশাং ভেষজ ত্বকের সংক্রমণের জন্য খুবই উপকারী। এটি ত্বকের চুলকানি দূর করে।
দশাং আয়ুর্বেদের দশটি ভেষজ থেকে তৈরি করা হয়, যা বাজারে পাওয়া যায়।

ব্যবহার- আপনার ত্বকে এটি প্রয়োগ করে প্রায় ১০-১৫ মিনিট পর সাধারণ পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

৫। নারকেল তেলঃ নারিকেল তেলের ময়েশ্চারাইজিং বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা শুষ্ক ত্বকে জাদুকরী প্রভাব ফেলে এবং আপনার ত্বককে দ্বিগুণ উজ্জ্বল করে তোলে। চুলকানির ক্ষেত্রে এটি খুবই উপকারী। সম্ভব হলে ঠান্ডা বা ভার্জিন নারকেল তেল ব্যবহার করুন, কারণ এতে রাসায়নিক কোনো উপাদান নেই।

ব্যবহার- গোসলের পর সারা ত্বকে নারকেল তেল লাগান। হাতে হালকা ম্যাসাজ করুন যাতে আপনার ত্বক তেল ভালোভাবে শুষে নেয়।

৬। ওটমিল পাউডারঃ ওটমিল পাউডারে রয়েছে স্যাপোনিন, যা ত্বক পরিষ্কার রাখতে সহায়ক। এটি ত্বককে ময়েশ্চারাইজ করে। এর অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য প্রদাহ কমায়।

ব্যবহার-

  • দুই কাপ ওটস মিক্সারে পিষে নিন।
  • এবার চার কাপ পানিতে ভিজিয়ে রাখুন।
  • এক বালতি পানি গরম করুন এবং এখন এই ওটগুলি একটি সুতির কাপড়ে বেঁধে সেই বালতিতে রাখুন।
  • এই পানি দিয়ে গোসল করুন বা এই পানিতে একটি তোয়ালে ভিজিয়ে তারপর তোয়ালে দিয়ে আপনার শরীরে চাপ দিন।
  • এরপর সাধারণ পানি দিয়ে মুছে ফেলুন।

৭। ওটিসি ওষুধঃ চুলকানির জন্য বাজারে অনেক ধরনের ওটিসি ওষুধ পাওয়া যায়, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া এগুলো সেবন করবেন না।

চুলকানি প্রতিরোধের উপায়

চুলকানি থেকে নিজেকে রক্ষা করা খুব একটা কঠিন কাজ নয়, শুধু বিশেষ কিছু বিষয়ের যত্ন নিলেই নিজেকে চুলকানি থেকে দূরে রাখতে পারেন।

  • প্রতিদিন পরিষ্কার পানি দিয়ে গোসল করতে ভুলবেন না।
  • সিন্থেটিক কাপড়ের তৈরি পোশাক একেবারেই পরবেন না। এগুলো ত্বকে ঘষে, এবং চুলকানির কারণ হয়।
  • ঠান্ডা আবহাওয়া থাকলেও খুব গরম পানি দিয়ে গোসল করা উচিত নয়।
  • শুধুমাত্র ত্বকের ধরনের জন্য উপযোগী পণ্য ব্যবহার করা উচিত। যে পণ্যগুলিতে প্রচুর রাসায়নিক ঊপাদান থাকে সেগুলি ত্বকের ক্ষতি করতে পারে।

চুলকানির ঝুঁকি ও জটিলতা

চুলকানির ঝুঁকি এবং জটিলতা সাধারণত চুলকানির কারণেই হয়ে থাকে। শুষ্ক ত্বকের মানুষদের চুলকানির প্রবণতা থাকে বেশি। কখনও কখনও অন্য কোনো রোগের কারণেও চুলকানি হতে পারে। আবার আঘাত বা অন্য সংক্রমণের কারণেও চুলকানি হয়। ঘরোয়া প্রতিকারে প্রায়ই কিছু চুলকানি সেরে যায়। কিন্তু যদি আপনার চুলকানি ক্রমাগত খারাপ হতে থাকে বা অন্যান্য লক্ষণও দেখা যায়, তাহলে দেরি না করে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যান।

চুলকানির সময় যেসব জিনিস এড়িয়ে চলা উচিৎ

কিছু জিনিস এড়িয়ে চলা খুবই জরুরি। যেমন,

  • খুব গরম পানি দিয়ে গোসল করবেন না।
  • খুব মোটা কাপড় বা সিন্থেটিক কাপড় পরা উচিত নয়।
  • যেখানে অতিরিক্ত চুলকানি হয়, ত্বকের সেই অংশ ঢেকে রাখতে হবে।
  • মানসিক চাপ থাকলে তা থেকে নিজেকে বের করার চেষ্টা করা উচিত।

চুলকানির সময় কি খাওয়া উচিত?

যদি কোন ব্যক্তির চুলকানি হয় তবে তার খাদ্যের বিশেষ যত্ন নেওয়া উচিত যাতে তিনি দ্রুত চুলকানি থেকে মুক্তি পান। যেমন-

নিরামিষভোজীরা ভিটামিন সি এবং পটাসিয়াম সমৃদ্ধ কলা খেতে পারেন। তিসি, মিষ্টি কুমড়া, তিল, ফ্যাটি অ্যাসিডযুক্ত সূর্যমুখী বীজের ব্যবহার চুলকানি কমাতে সাহায্য করে।

সবুজ শাক সবজিতে প্রদাহরোধী বৈশিষ্ট থাকার কারণে সব ক্ষেত্রেই প্রয়োজনীয় কারণ এগুলোতে থাকা অক্সিডেন্ট আমাদের শরীরে পুষ্টি জোগায়।

আপনি যদি আমিষভোজী হন তবে মুরগির মাংস খান। মুরগির স্যুপে অ্যামাইনো অ্যাসিড থাকে, যা ত্বককে সুস্থ রাখতে সহায়ক। স্যামন, ম্যাকেরেল এবং ওমেগা 3 সমৃদ্ধ সার্ডিন খাওয়া উচিত যা ভিটামিন ডি এবং প্রোটিন এর চমৎকার উৎস।

চুলকানি একটি সাধারণ সমস্যা যা যে কোনো সময় যে কারোরই ঘটতে পারে। এর জন্য বাজারে অনেক ওটিসি ওষুধ পাওয়া যায়। কিছু ঘরোয়া উপায় অবলম্বন করে এবং আপনার খাদ্যতালিকায় পরিবর্তন আনলে আপনি চুলকানির সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারেন। শরীরের সঠিক যত্ন নেওয়াও গুরুত্বপূর্ণ, যার মধ্যে রয়েছে সঠিক তাপমাত্রার পানিতে গোসল করা এবং পরিষ্কার জামাকাপড় পরা।

আরো পড়ুনঃ

zahid

A professional SEO Expert & Digital Marketing Consultant. Enhancing online visibility of business is my job. Keeping update myself with new search algorithm update and stay top on search results is my passion.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button