বাড়ি ও বাগান

বাড়িতে ছাদে বা টবে লাউ চাষ পদ্ধতি

লাউ চাষ পদ্ধতি: লাউ আমাদের দেশের একটি অতি পরিচিত সবজি। পুষ্টিগুণে ভরপুর এ সবজিটি সাধারণত শীতকালে চাষ করা হয় বেশি। তবে শীতের পাশাপাশি এখন এটি গ্রীষ্মকালেও চাষ হয়। লাউ শাক ও খুব পুষ্টিকর। লাউয়ের চেয়ে এর শাক বেশি পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ। আজ আমরা জানব লাউ চাষ পদ্ধতি।

মাটি ও জলবায়ু

লাউ চাষের জন্য সবচেয়ে উপযোগী মাটি হচ্ছে জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ দোআঁশ মাটি বা এঁটেল দোআঁশ মাটি। বাংলাদেশে লাউ চাষের সবচেয়ে উপযুক্ত সময় হচ্ছে শীতকাল কারণ বাংলাদেশ নাতিশীতোষ্ণ দেশ তাই বেশি গরম ও না আবার বেশি ঠান্ডা ও না এমন আবহাওয়া লাউ চাষে উপযোগী।

বীজ বপন

লাউয়ের বীজ পলিব্যাগে বপন করা ভালো। বীজ বপন করার জন্য সমপরিমাণ মাটি ও গোবর সার মিশায়ে পলিব্যাগে দিতে হবে। ব্যাগের আকার হবে ৮×১০ সেমি। পলিব্যাগ ছিদ্রযুক্ত হতে হবে এবং একটি পলিব্যাগে দুইটি বীজ বপন করতে হবে। বীজ বপন করার আগে বীজকে পানিতে ভিজিয়ে নিতে হবে ১৫-২০ ঘন্টা। তারপর পানি থেকে তুলে টিস্যু দিয়ে অতিরিক্ত পানি শুকিয়ে নিয়ে পলিথিনে রোপন করতে হবে। লাউয়ের বীজের খোসা শক্ত হওয়ার কারণে বীজ অঙ্কুরোদগম হতে সময় লাগে। এই সমস্যা দূর করার জন্য বীজ পানিতে ভিজিয়ে রাখা হয়। বীজ বপন করার পর পলিথিনে নিয়ম করে পানি দিতে হবে যেন মাটি শুকিয়ে না যায়।

চারার পরিচর্যা

বীজ থেকে চারা গজানোর পর তার সঠিক যত্ন করতে হবে। চারার মাটির ধরন বুঝে পানি দিতে হবে। তবে পানি দেয়ার সময় খেয়াল রাখতে হবে পানি যেন চারার গায়ে না পড়ে। মাটি দলা বেধে থাকলে তা আলগা করে দিতে হবে। চারার বয়স ১৬-১৭দিন হবার পর তা মাঠে লাগানোর উপযুক্ত হয়। রোপন করার আগ পর্যন্ত গাছ গুলো আধা ছায়ায় রাখতে হবে।

বেড তৈরি

জমিতে বেড তৈরি করতে হবে। এক বেড থেকে আরেক বেডের প্রস্থ হবে ২.৫ মিটার এবং উচ্চতা হবে ১৫-২০ সেমি। বেডের মাঝখানে ৬০ সেমি নালা থাকতে হবে।

মাদা তৈরি

মাদা তৈরির সময় মাদার মাটি চুন দিয়ে শোধন করে নিতে হবে। মাদার আকার ও গভীরতা হবে ৫০ সেমি। মাদায় ২ মিটার পর পর সারি তৈরি করে তাতে চারা রোপন করা উত্তম।

সার প্রয়োগ

জমিতে উত্তমরূপে সার প্রয়োগ করতে হবে। জমি চাষ করার সময় তাতে গোবর সার দিতে হবে ১০০ কেজি, টিএসপি সার দিতে হবে ২ কেজি, ইউরিয়া সার ও এমওপি দিতে হবে ২ কেজি। এছাড়া মাদা তৈরির সময় মাদায় ও সার প্রয়োগ করতে হবে। মাদায় ১০ কেজি গোবর, ৫০ গ্রাম টিএসপি, ৫০ গ্রাম এমওপি দিতে হবে। এছাড়াও চারা রোপন করার ৩০-৩৫ দিন পর প্রতি ২০ দিন পর পর প্রতি মাদায় ইউরিয়া দিতে হবে ৩০ গ্রাম করে কমপক্ষে ৪ বার।

সেচ প্রয়োগ

লাউ গাছে প্রচুর পানি প্রয়োজন হয়। গাছ যদি প্রয়োজনীয় পানি না পায় তাহলে গাছের বৃদ্ধি ব্যাহত হয় এবং ফলন বাধাপ্রাপ্ত হয়। গাছের ফল আস্তে আস্তে ঝরে পড়ে। উত্তম ফলন পেতে হলে নিয়মিত পানি দিতে হবে। গাছের গোড়া যেন শুকনা না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। প্রয়োজনে নালায় পানি দিয়ে রাখতে হবে যেন পানি শুকিয়ে গেলে নালা থেকে পানি টেনে নিতে পারে। শুকনা মৌসুমে সাধারনত ৪-৫ দিন পর পর জমিতে সেচ দিতে হয়।

আগাছা দমন

জমির আগাছা নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে। লাউ গাছের গোড়ায় আগাছা থাকলে গাছের ফলন বাধাপ্রাপ্ত হয় এবং আগাছা গাছের খাদ্য ও শোষণ করে নেয়। এছাড়া কিছু প্রজাতির আগাছা লাউ গাছের রোগও সৃষ্টি করে থাকে। তাই গাছের গোড়ায় যেন আগাছা না জন্মে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এছাড়া লাউ গাছের গোড়ায় কিছু শাখা দেখা যায়। এদের শোষক শাখা বলে। গাছের গোড়ায় দিকের এ শাখা গুলো গাছের বৃদ্ধিতে বাধা দেয় তাই এগুলো ছাটাই করে ফেলতে হবে।

মালচিং ও বাউনি দেয়া

যেহেতু লাউ গাছ বেশি পানি শোষন করে ও মাটি খুব দ্রুত শুষ্ক হয়ে যায় তাই গাছের গোড়ায় মালচিং দেয়া জরুরি। মালচিং হলো গাছের গোড়ার মাটি বিভিন্ন বস্তু দিয়ে বিশেষ পদ্ধতিতে ঢেকে দেয়া যাতে মাটি দ্রুত শুকিয়ে না যায়।
এছাড়া লাউ গাছ যেহেতু লতানো উদ্ভিদ তাই এর বেড়ে উঠার জন্য দরকার বাঁশ বা রশি জাতীয় বস্তুর। একে বাউনি বলে।

লাউ চাষে কৃত্রিম পরাগায়ন

লাউয়ের ফলন বৃদ্ধির জন্য এর কৃত্রিম পরাগায়ন ঘটানো যায়। এর মাধ্যমে প্রায় ৩০-৩৫ শতাংশ ফলন বৃদ্ধি হয়। কৃত্রিম পরাগায়ন করতে হবে হাত দিয়ে এবং এর সময় হলো দুপুরের পর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত। তবে বেশি পরিমান চাষে হাত দিয়ে কৃত্রিম পরাগায়ন সম্ভব নয়। সেক্ষেত্রে জমিতে মৌমাছির কলোনি স্থাপন করে দেয়া যায় বা কোন পাখির সাহায্য নেয়া যেতে পারে।

ফসল সংগ্রহ

একটি পরিপক্ক লাউয়ের গায়ে অনেক শুং থাকবে এবং নখ দিয়ে চাপ দিলে খুব সহজেই দেবে যাবে। সাধারনত পরাগায়ন হওয়ার ১২-১৫ দিনের মধ্যেই ফসল সংগ্রহের উপযোগী হয়ে উঠে।

টবে বা ছাদে লাউ চাষ পদ্ধতি

বাসাবাড়িতে আজকাল অনেকেই বারান্দায় টবে বা ছাদে বিভিন্ন সবজি চাষ করে থাকে। ছাদে বা টবে চাষ করার জন্য শীতকালীন ফসল হিসেবে লাউ খুবই উপযোগী।

মাটি
ছাদে বা টবে যেখানেই চাষ করা হোক না কেন শুরুতেই মাটি তৈরি করতে হবে। মাটি হতে হবে দোআঁশ মাটি তবে বেলে দো আঁশ মাটিতেও লাউ চাষ করা যায়। কিন্তু সার বেশি দিতে হবে।

বীজ বপন
বীজ বপন করার আগে চারা তৈরি করে নিতে হবে। লাউয়ের চারা পলিব্যাগে বপন করা উত্তম। এর জন্য পলিব্যাগের মাটি আগে তৈরি করে নিতে হবে এবং তারপর বীজ বপন করতে হবে। একটি পলিব্যাগ দুইটি চারা রোপন করা যাবে। পলিব্যাগে চারা রোপন করার পর খেয়াল রাখতে হবে মাটি যেন শুকিয়ে না যায়। মাটি শুকিয়ে গেলে তাতে পরিমান মতো পানি দিতে হবে।

টব বা পাত্র তৈরি
ছাদে চাষ করার জন্য একটি ড্রামের অর্ধেক ব্যবহার করতে হবে বা এর সমান কোন পাত্র ব্যবহার করতে হবে। ড্রামের তলায় কয়েকটি ছিদ্র করতে হবে যাতে অতিরিক্ত পানি বের হয়ে যেতে পারে। ড্রামের ছিদ্রের উপর ছোট ছোট ইটের টুকরা দিতে হবে। তারপর এর উপর মাটি দিতে হবে।

মাটি তৈরি
দুই ভাগ মাটির সাথে ১ ভাগ গোবর সার,৫০ গ্রাম টিএসপি, ৫০ গ্রাম পটাশ ও ২৫০ গ্রাম সরিষার খৈল মিশাতে হবে। এরপর এটা পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে ১০-১২ দিন। ১০-১২ দিন পর মাটি আলগা করে দিতে হবে। তারপর আবার ৪-৫ দিন রাখতে হবে। তারপর মাটি ঝুরঝুরা হলে তাতে চারা রোপন করতে হবে। চারার গোড়ায় ভালো করে মাটি চেপে দিতে হবে এবং গোড়া মাটি দিয়ে উচু করে দিতে হবে।

পরিচর্যা
চারা রোপন করার পর প্রথম কয়েকদিন অল্প পরিমান পানি দিতে হবে। গাছ বড় হবার সাথে সাথে পানির পরিমান বাড়াতে হবে। কারণ লাউ গাছ প্রচুর পানি শোষণ করে তাই বাড়ন্ত গাছে পানিও বেশি লাগে। গাছে যদি প্রতিদিনের মাছ মাংস ধোয়া পানি দেয়া যায় তাহলে তা গাছের জন্য খুব উপকারি হয়। খেয়াল রাখতে হবে গাছে যেন পানির অভাব না হয় তাহলে ফলন ব্যাহত হবে। প্রয়োজনে মাটি আলগা করে দিতে হবে এবং গাছ যেন পর্যাপ্ত রোদ পায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
গাছ একটু বড় হলে সামান্য পরিমান ইউরিয়া সার দেয়া ভালো্। এছাড়াও ১৫-২০ দিন পর পর সরিষার খৈল পচা পানি দিলেও গাছের উপকার হয়।
লাউ গাছ লতানো উদ্ভিদ তাই একে মাচা করে দিলে ফলন ভালো হবে।

আগাছা পরিষ্কার

নিয়মিত গাছের গোড়ায় আগাছা পরিষ্কার করতে হবে।

ফসল সংগ্রহ
লাউ পাতা শাক হিসেবে খাওয়া যায় তাই গাছ বড় হলে এক মাসে কয়েকবার এর পাতা সংগ্রহ করা যাবে। এছাড়া ফল পরিপক্ক হলে তা সংগ্রহ করতে হবে। পরিপক্ক লাউয়ের গাছে অসংখ্য শুং থাকবে এবং নখ দিয়ে চাপ দিলে তা দেবে যাবে।

5/5 - (42 votes)

Dilruba Afroj Puspita

Hi, I’m Dilruba Afroj Puspita — a writer at Shopnik who’s passionate about sharing practical insights on health, beauty, and technology. I enjoy making complex topics easy to understand and useful for everyday life. Whether it’s a skincare guide, wellness tip, or a review of the latest gadgets, I love helping readers stay informed and inspired.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button