ইসলাম

দোয়া মাসুরা বাংলা উচ্চারণ ও অর্থ, কখন পড়তে হয়, নিয়ম

দোয়া মাসুরা বাংলা উচ্চারণ ও অর্থ, কখন পড়তে হয় এবং পড়ার নিয়ম জানতে পারবেন এই পোস্টে। দোয়া মাসুরা একটি গুরুত্বপূর্ণ দোয়া মুসলমানদের জন্য। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজে এই দোয়া প্রয়োজন। এই দোয়া ব্যতিত নামাজ ও সম্পূর্ণ হয় না। তাই একজন মুসলমান হওয়ার জন্য এই দোয়াটি সকলের জানা উচিত। দোয়া মাসুরা সাধারণত নামাজের শেষ বৈঠকে আত্তাহিয়াতু দরুদে ইব্রাহিম পড়ার পর দোয়া মাসুরা পড়তে হয়। দোয়া মাসুরা পড়ে তারপর সালাম ফেরানো হয়।

দোয়া মাসুরা আরবি

اللّٰهُمَّ إِنِّيْ ظَلَمْتُ نَفْسِيْ ظُلْمْاً كَثِيْراً، وَلاَ يَغْفِرُ الذُّنُوْبَ إِلاَّ أَنْتَ، فَاغْفِرْ لِيْ مَغْفِرَةً مِنْ عِنْدِكَ وَارْحَمْنِي، إِنَّكَ أَنْتَ الغَفُوْرُ الرَّحِيْمُ

দোয়া মাসুরা বাংলা উচ্চারণ

আল্লাহুম্মা ইন্নি যলামতু নাফসি যুলমান কাসিরা ওয়ালা ইয়াগ ফিরুয যুনুবা ইল্লা আনতা ফাগফিরলি মাগফিরাতাম মিন ইনদিকা ওয়ার হামনি ইন্নাকা আনতাল গাফুরুর রাহিম ।

দোয়া মাসুরা বাংলা অর্থ

হে আল্লাহ ! আমি আমার নিজ আত্মার উপর বড়ই অত্যাচার করেছি, গুনাহ মাফকারী একমাত্র আপনিই। অতএব আপনি আপনা হতেই আমাকে সম্পূর্ণ ক্ষমা করুন এবং আমার প্রতি দয়া করুন। নিশ্চয়ই আপনি ক্ষমাশীল দয়ালু।

দোয়া মাসুরা পড়ার নিয়ম

দোয়া মাসুরা কখন পড়তে হয়ঃ দোয়া মাসুরা সাধারণত নামাজের শেষ বৈঠকে আত্তাহিয়াতু দরুদে ইব্রাহিম পড়ার পর দোয়া মাসুরা পড়তে হয়। নামাজে হাত বা নিয়ত বাধার পর সানা (সুবাহাকাল্লাহুম্মা)পড়তে হয়। তারপর সূরা ফাতিহার সাথে অন্য সূরা মিলিয়ে পড়ে রুকুতে যেতে হয়। এরপর রুকুতে গিয়ে সুবহা-না রব্বিয়াল আ`যিম পড়তে হয় । তারপর রুকু থেকে সোজা হয়ে দাঁড়াতে হয়। তারপর রাব্বানা লাকাল হামদ পড়তে হয়। তারপর আবার সেজদায় যেতে হয়।সেজদায় সুবহা-না রব্বিয়াল আ‘লা পড়তে হয় । এভাবে দুই সেজদার পড় উঠে দাঁড়িয়ে হাত বাঁধতে হয় । এভাবে দুই রাকাত নামাজ হলো দুই রাকাত আদায় করতে হয় তারপর দুই রাকাতে সিজদার পর আর উঠে দাঁড়িয়ে হাত বাধতে হয় না তখন আত্তাহিয়াতু ও দরুদ ইবরাহীম তারপরে সালাম ফিরানোর আগে দোয়া মাসুরা পড়তে হয়।

দোয়া মাসুরা হাদিস

ইবনু মাসউদ (রাঃ) বর্ণিত তাশাহহুদে (অর্থাৎ আত্তাহিয়াতু)এর শেষে বর্ণিত হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, অতঃপর দো’আ সমূহের মধ্যে যে দো’আ সে পসন্দ করে, তা করবে। (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৯০৯; মিরআত হা/৯১৫, ৩/২৩৫)

এ কথার ব্যাখ্যায় বিদ্বান গণের মধ্যে একদল বলেছেন, এ সময় গোনাহ নেই এবং আদবের খেলাফ নয়, দুনিয়া ও আখেরাতের এমন সকল প্রকার দুআ করা যাবে। পক্ষান্তরে অন্যদল বলেছেন, কুরআন হাদীসে বর্ণিত দো’আ সমূহের মাধ্যমেই কেবল প্রার্থনা করতে হবে। কেননা আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, আমাদের এই ছালাতে মানুষের সাধারণ কথাবার্তা বলা চলে না। এটি কেবল তাসবিহ, তাকবির ও কুরআন পাঠ মাত্র। (মুসলিম, আবু দাউদ, নাসাঈ, মিশকাত হা/৯৭৮)

নামাযের শেষ বৈঠকে দরূদ শরীফের পর দোয়া মাসুরা পড়তে হয়। এক্ষেত্রে কোরআন-হাদিসে বর্ণিত যেকোনো একটি মাসনূন দোয়া পড়লেই হয়। এমনকি একাধিক দোয়াও পড়া যায়। কেননা, হাদীস শরীফে এসেছে-

ثُمَّ يَتَخَيَّرُ مِنَ الْمَسْأَلَةِ مَا شَاءَ
অতঃপর (দরূদ পাঠের পর) যে দোয়া ইচ্ছা পড়বে। (সহীহ মুসলিম ৪০২)

তবে এক্ষেত্রে সেই দোয়াগুলো পড়া উত্তম হবে, যেগুলো রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) সরাসরি বলেছেন। আর সেগুলো হলোঃ

আবু হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, যখন তোমাদের কেউ নামাজে তাশাহহুদ পড়বে, তখন চারটি বিষয় থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করবে। বলবেঃ

اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ جَهَنَّمَ وَمِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ وَمِنْ فِتْنَةِ الْمَحْيَا وَالْمَمَاتِ وَمِنْ شَرِّ فِتْنَةِ الْمَسِيحِ الدَّجَّالِ

অর্থঃ হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি জাহান্নামের আযাব থেকে, কবরের আযাব থেকে, জীবন-মৃত্যুর ফিতনা থেকে এবং মাসীহ দাজ্জালের অনিষ্ট থেকে। (সহীহ মুসলিম ৫৮৮)

অপর বর্ণনায় এসেছে, উরওয়া ইবনু যুবাইর রহ. থেকে বর্ণিত যে, নবী (ছাঃ) -এর সহধর্মিনী আয়িশা রাযি. তাঁকে বলেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এ বলে দোয়া করতেনঃ
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ فِتْنَةِ الْمَسِيحِ الدَّجَّالِ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ فِتْنَةِ الْمَحْيَا وَفِتْنَةِ الْمَمَاتِ، اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْمَأْثَمِ وَالْمَغْرَمِ

অর্থঃ হে আল্লাহ! আমি তোমার আশ্রয় প্রার্থনা করছি কবরের আযাব থেকে, দাজ্জালের ফিৎনা থেকে। আশ্রয় প্রার্থনা করছি জীবন ও মৃত্যুর ফিতনা থেকে। হে আল্লাহ ! আমি আশ্রয় চাচ্ছি গুনাহ ও ঋণ থেকে। (সহীহ বুখারী ৮৩৩ সহীহ মুসলিম ৫৮৯)

আমাদের মাঝে সবচেয়ে প্রসিদ্ধ যে দোয়া তা আবু বকর রা.-এর আবেদনের প্রেক্ষিতে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাঁকে শিখিয়েছেন।
হাদীস শরীফে এসেছে, হযরত আবু বকর রাযি. রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) -এর কাছে আবেদন করলেন, আমাকে একটি দোয়া শিখিয়ে দিন, যা আমি নামাযে পড়ব। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, এ দোয়াটি বলবেঃ

اللَّهُمَّ إِنِّي ظَلَمْتُ نَفْسِي ظُلْمًا كَثِيرًا وَلا يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلا أَنْتَ فَاغْفِرْ لِي مَغْفِرَةً مِنْ عِنْدِكَ وَارْحَمْنِي إِنَّك أَنْتَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ
অর্থঃ হে আল্লাহ্! আমি নিজের উপর অধিক যুলুম করেছি। আপনি ছাড়া সে অপরাধ ক্ষমা করার কেউ নেই। আপনার পক্ষ থেকে আমাকে তা ক্ষমা করে দিন এবং আমার উপর রহমত বর্ষণ করুন। নিশ্চই আপনি ক্ষমাশীল ও দয়াবান। (সহীহ বুখারী ৮৩৪ সহীহ মুসলিম ২৭০৫)

বর্ণিত উভয় হাদীছের মধ্যে সামঞ্জস্য এটাই হতে পারে যে, অন্যের উদ্দেশ্যে নয় এবং আদবের খেলাফ নয়, আল্লাহর নিকট এমন সকল দো’আ করা যাবে। তবে সালাতের পুরা অনুষ্ঠানটিই যেহেতু আরবী ভাষায়, সেহেতু অনারবদের জন্য নিজেদের তৈরী করা আরবিতে প্রার্থনা করা নিরাপদ নয়। দ্বিতীয়ত: সর্বাবস্থায় সকলের জন্য হাদীছের দুআ পাঠ করাই উত্তম। কিন্তু যখন দো’আ জানা থাকে না, তখন তার জন্য সবচেয়ে উত্তম হবে প্রচলিত দো’আয়ে মাছূরাহ (আল্লা-হুম্মা ইন্নী যালামতু…) শেষে নিম্নের দোয়াটির ন্যায় যে কোন একটা সারগর্ভ দোয়া পাঠ করা, যা দুনিয়া ও আখেরাতের সকল প্রয়ােজনকে শামিল করে। আনাস (রাঃ) বলেন, এ দোয়াটি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) অধিকাংশ সময় পড়তেন।

আল্লাহুম্মা রাব্বানা আতিনা ফিদ্দুনিয়া হাসানাতাঁও ওয়াফিল আ-খিরাতে হাসানাতাঁও ওয়া কিনা আযা-বান্না-র। অথবা আল্লা-হুম্মা আ-তিনা ফিদ্দুনিয়া ..।

হে আল্লাহ! হে আমাদের পালনকর্তা! তুমি আমাদেরকে দুনিয়াতে মঙ্গল দাও ও আখেরাতে মঙ্গল দাও এবং আমাদেরকে জাহান্নামের আযাব থেকে বাঁচাও। (বুখারী হাদিস নং ৪৫২২)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে নামাজসহ দীনের প্রত্যেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সহিহ জ্ঞান ও বুঝ দান করুন। সুন্নাহ অনুযায়ী জীবন অতিবাহিত করার তাওফিক দান করুন।

আমিন।

5/5 - (14 votes)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button