বাড়ি ও বাগান

লাউ গাছের বিভিন্ন ধরনের রোগ ও প্রতিকার

লাউ সাধারনত শীতকালীন সবজি। তবে এখন এটি গ্রীষ্মকালেও চাষ করা হয়ে থাকে। বাসাবাড়িতেও আজকাল অনেকে ছাদে বা বারান্দায় টবে লাউ গাছ লাগিয়ে থাকেন। যেখানেই চাষ করা হোক না কেন সঠিক পরিচর্যার অভাবে ফলন হতে পারে ব্যাহত। তাই এদিকে সচেতন দৃষ্টি রাখতে হবে।

যেকোন সবজি বা ফসল চাষেই আমাদের নজর রাখতে হয় তা যেন পোকামাকড় বা রোগবালাই দ্বারা আক্রান্ত না হয়। আজ আমাদের আলোচ্য বিষয় লাউ গাছের রোগ ও প্রতিকার।

১. ডাউন মিলডিউ রোগ

এটি একটি ছত্রাকজনিত রোগ। সাধারনত পাতার মধ্যে পানি জমে থাকলে এই রোগ হতে পারে।

লক্ষণ
পাতার উপরের দিক ফ্যাকাশে সবুজ হয়ে যায়। আস্তে আস্তে হলুদ হয় এবং পরে বাদামি রং ধারন করে।

প্রতিকার
এই রোগের প্রধান কারণ হলো পাতার মধ্যে পানি জমে থাকা। তাই পাতায় যেন পানি জমে না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। কোন পাতার ফাকেঁই যেন পানি না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
এছাড়া এক লিটার পানিতে ১-২ গ্রাম ম্যানকোজের বা রিডোমেল গোল্ড মিশিয়ে স্প্রে করে দিতে হবে।

২. পাউডার মিলডিউ রোগ

এটিও একটি ছত্রাকজনিত রোগ। এর ফলে পাতা ঝরে যায়, ফলের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়।

লক্ষণ
সাধারনত বয়স্ক পাতায় এ রোগ বেশি হয়। প্রথমে পাতায় ফ্যাকাশে হলুদ দাগ পড়ে। আস্তে আস্তে পাতায় দুই দিকেই সাদা সাদা পাউডারের মত দাগ দেখা যায়। এক পর্যায়ে পুরো পাতা, কান্ড দাগে ভরে যায়।

প্রতিকার
মাটিতে যেন অতিরিক্ত মাত্রায় নাইট্রোজেন না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এ জন্য মাটি পরীক্ষা করতে হবে। নিয়মিত আগাছা পরিষ্কার করতে হবে এবং গাছের গোড়ায় বায়ু চলাচলের ব্যবস্থা রাখতে হবে। কোন পাতা রোগাক্রান্ত দেখতে তা সাথে সাথেই কেটে ফেলতে হবে। এছাড়া সালফার বা কপার জাতীয় ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করা যেতে পারে।

৩. স্টেম ব্লাইট রোগ

এটি ছত্রাকজনিত রোগ। বীজ বা মাটি যদি ঠিকমত শোধন করা না হয় তাহলে এ রোগ হবার আশংকা থাকে।

লক্ষণ
স্টেম ব্লাইট রোগে গাছের কান্ড কালো হয়ে যায় ও এরপর পঁচে যায়। কিছুদিন পর আক্রান্ত কান্ড ভেঙ্গে যায়। পাতায় কালচে বাদামি গোল দাগ দেখা যায়।

প্রতিকার
সবচেয়ে ভালো হয় রোগমুক্ত চারা বা বীজ ব্যবহার করা। এজন্য বীজ বপন করার আগেই শোধন করে নেয়া উত্তম। এছাড়া গাছ আক্রান্ত হলে তা তুলে ফেলে দিতে হবে। ম্যানকোজেব বা রিডোমিল ২ গ্রাম এক লিটার পানিতে মিশিয়ে ৭-১০ দিন পর পর স্প্রে করে দিলেও উপকার পাওয়া যাবে।

৪. রেড পাম্পকিন রোগ

এক ধরনের পোকার আক্রমণে এই রোগ হয়।

লক্ষণ
পাম্পকিন বিটল পোকা দ্বারা এ রোগ হয়। প্রাপ্তবয়স্ক পোকা গাছের পাতা খেয়ে ফেলো। শুধু পাতার শিরা আর উপশিরা দেখা যায়। এই পোকা গাছের নিচের দিকের কান্ড ও খেয়ে ফেলে তাই গাছ শুকিয়ে মারা যায়। ফুল ও কচি ফল ও এ পোকা দ্বারা আ্ক্রান্ত হয়।

প্রতিকার
পোকা ধরে ধরে মেরে ফেলতে হবে। বেশি মাত্রায় আক্রান্ত হলে কার্বো ফুরান জাতীয় কীটনাশক প্রয়োগ করতে হবে।

৫. মাছি পোকা রোগ

মাছির মতো দেখতে এক জাতীয় পোকা দ্বারা এ রোগ হয়।

লক্ষণ
স্ত্রী পোকা কচি ফলের নিচের দিকে শুড় ঢুকিয়ে ডিম পাড়া শুরু করে। পরে এ থেকে কীট বেরিয়ে ফল খেতে শুরু করে। ফল পচে যায়, বিকৃত হয়ে যায়, হলুদ রঙ ধারণ করে ও ঝরে পরে।

প্রতিকার
ফল পোকা দ্বারা আক্রান্ত হলে সেই ফল ফেলে দিতে হবে। কচি ফল পলিথিনে ঢেকে দিতে হবে। এছাড়া সিকো আলফা জাতীয় ওষুধ এক লিটার পানির সাথে ২.৫ ইসি মিশিয়ে স্প্রে করা যেতে পারে।

৬. জাব পোকা

জাব পোকার আক্রমনে এ রোগ হয়ে থাকে। পোকা গাছের পাতা, ফুল, ফলের রস খেয়ে ফেলে তাই গাছ নেতিয়ে পড়ে।

প্রতিকার
পোকা আক্রান্ত স্থান ফেলে দিতে হবে। প্রাথমিক পর্যায়ে শুকনো ছাই বা পানি স্প্রে করতে হবে। এছাড়া এ পোকা দমনে হলুদ ফাঁদ খুবই উপযোগী। হলুদ কাপড়ে আঠা মিশ্রিত করে জমিতে টানিয়ে রাখতে হবে। জাব পোকা এসে এ কাপড়ে উড়ে এসে আটকে যাবে। একে হলুদ ফাঁদ বলে। এছাড়া তামাকের গুড়া, সাবানের গুড়া বা নিমের নির্যাস স্প্রে করা যেতে পারে।
পোকার আক্রমণ বেশি হলে এক লিটার পানিতে এডমেয়ার ২০ এসএল ০.৫ মিলি মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।

৭. ঢলে পড়া রোগ

সাধারনত ছত্রাক বা ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণে এ রোগ হয়ে থাকে। এ রোগে আক্রান্ত হলে গাছ ঢলে পড়ে।

প্রতিকার
বীজ শোধন করে বপন করতে হবে। গাছ আক্রান্ত হলে পুড়ে ফেলতে হবে। এছাড়া জমিতে ব্লিচিং পাউডার ছিটালে উপকার পাওয়া যাবে।

৮. থ্রিপস পোকা রোগ

এ পোকা গাছের কচি পাতা ও আগার রস খেয়ে ফেলে। এতে গাছ নেতিয়ে পড়ে।

প্রতিকার
হলুদ ফাঁদ ব্যবহার করা যেতে পারে। এছাড়া নিম পাতার নির্যাস প্রয়োগ করা যেতে পারে।

৯. পাতা পোড়া রোগ

এক ধরনের ছত্রাকের আক্রমণে এই রোগ হয়।

লক্ষণ
প্রথমে হলদে বাদামি রঙের দাগ দেখা যায় পাতায়। আস্তে আস্তে দাগ বড় হয় এবং পুরো পাতায় ছড়িয়ে যায়। পাতা দেখলে মনে হয় পুড়ে গেছে।

প্রতিকার
আক্রান্ত গাছ সরিয়ে ফেলতে হবে। বেশি আক্রমণ হলে টেবুকোনাজল বা ট্রাইফ্লক্সিস্ট্রবিন জাতীয় ওষুধ প্রয়োগ করতে হবে।

১০. লিফ কার্ল রোগ

এটি একটি ভাইরাসজনিত রোগ। একধরনের সাদা মাছি দ্বার এ রোগ হয়ে থাকে।

লক্ষণ
আক্রান্ত গাছ ছোট হয়ে থাকে। গাছের পাতা কুচঁকে যায় ও পাতায় ভাজের মতো সৃষ্টি হয়।

প্রতিকার
আক্রান্ত গাছ ধ্বংস করে ফেলতে হবে। জমি সবসময় পরিষ্কার করে রাখতে হবে। এছাড়া এক লিটার পানিতে ডায়ামেথয়েট বা এডমেয়ার মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।

5/5 - (18 votes)

Dilruba Afroj Puspita

Hi, I’m Dilruba Afroj Puspita — a writer at Shopnik who’s passionate about sharing practical insights on health, beauty, and technology. I enjoy making complex topics easy to understand and useful for everyday life. Whether it’s a skincare guide, wellness tip, or a review of the latest gadgets, I love helping readers stay informed and inspired.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button