স্বাস্থ্য

কালমেঘের উপকারিতা এবং পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া

কালমেঘ কি?
কালমেঘ একটি ভেষজ উদ্ভিদ, যা ঔষধি গুণে ভরপুর। এর পাতা সবুজ, মরিচের পাতার মতো হলুদ। ফলের উভয় প্রান্তে ধারালো ধার থাকে। এর শিকড় ছোট, পাতলা, লম্বা এবং স্বাদে খুবই তিক্ত।

কালমেঘের বোটানিক্যাল নাম Andrographis paniculata। এটি Acanthaceae পরিবারের অন্তর্গত।

কোথায় পাওয়া যায় বা জন্মায় ?
সারা দেশে কালমেঘ গাছের চাষ হয়। বিশেষ করে বন্য অঞ্চলে এবং সমতল ভূমিতে কালমেঘের চাষ বেশি হয়।

কালমেঘ কিভাবে ব্যবহার করবেন ?
কালমেঘ গাছের ব্যবহারের পরিমাণ হতে হবে:-

  • গুঁড়া – ১-৩ গ্রাম
  • রস – ৫-১০ মিলি
  • ক্বাথ -২০-৪০ মিলি
  • তরল নির্যাস – ০.৫-১ মিলি

কালমেঘের (নীলাভেম্বু ব্যবহার) সম্পূর্ণ সুবিধা নিতে, ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী এটি সেবন করুন।

কালমেঘের উপকারিতা ও ব্যবহার

আয়ুর্বেদ অনুসারে, কালমেঘ ব্যবহার করে আপনি শরীরে ঘটতে থাকা ব্যাধিগুলি প্রতিরোধ করতে পারেন। কালমেঘ ব্যবহার করে অনেক রোগের চিকিৎসা করা যায়।

শরীরের দুর্বলতার জন্যঃ শরীরে শক্তি পেতে ১০-২০ মিলি কালমেঘের পাতার ক্বাথ পান করুন। এতে শারীরিক দুর্বলতা দূর হয়।

অ্যাসিডিটির জন্যঃ

  • কালমেঘ, নিমের ছাল, ত্রিফলা, পিত্তপাপদ এবং ভৃঙ্গরাজ ইত্যাদি ওষুধ থেকে ক্বাথ তৈরি করুন। ক্বাথের মধ্যে ১০ মিলি মধু মিশিয়ে পান করুন, এটি অ্যাসিডিটিতে উপশম দেয়।
  • কালমেঘ পাতার রস ১-২ মিলি খেলে হজমজনিত এবং শিশুদের অন্যান্য পেটের রোগে উপকারী।
  • কালমেঘ প্ল্যান্ট (নীলাভেম্বু) এর পাউডার পেটের রোগের জন্য ব্যবহার করা হয়।

বদহজমের জন্যঃ

  • বদহজম হলে কালমেঘ পাতার ১০ মিলি ক্বাথ পান করলে বদহজম দূর হয়।
  • পরিপাকতন্ত্রকে সুস্থ করতে কালমেঘ, কুটকি, বিয়োষ (সোঁথ, মরিচ, পিপল), নাগরমোথা, চিত্রকমূলের এবং কুটাজের ছাল মিহি গুঁড়ো করে নিন। এটি ১-২ গ্রাম পরিমাণ গুড়ের শরবত দিয়ে খান। এটি পরিপাকতন্ত্রের রোগে উপকারী। এর পাশাপাশি এটি জন্ডিস, জ্বর, রক্তশূন্যতা এবং ডায়রিয়ায় উপকারী।
  • কালমেঘ, কুটকি, পারওয়াল পাতা, নিমের ছাল ধীর আগুনে রান্না করুন এবং পিষে নিন। এটি ৬৫-১২৫ মিলিগ্রাম ডোজে ব্যবহার করলে ডুওডেনাল (আইবিএস) রোগে উপকার পাওয়া যায়।

চর্মরোগের চিকিৎসায়ঃ

  • কালমেঘ, সাইরিক, পটোল ইত্যাদির ক্বাথ খেলে চুলকানির মতো চর্মরোগ নিরাময় হয়।
  • চুলকানি সারাতে ২ গ্রাম ধামসা এবং ৪ গ্রাম কালমেঘ সারারাত জলে ভিজিয়ে রাখুন। সকালে ও সন্ধ্যায় পেস্ট তৈরি করে দুধের সাথে খান। এটি খোস-পাঁচড়ার মত গুরুতর রোগও নিরাময় করে।

সোরিয়াসিস চিকিৎসায়ঃ কালমেঘের পাউডার ব্যবহার সোরিয়াসিসে উপকারী। গ্লিসারিনের সঙ্গে কালমেঘের গুঁড়া মিশিয়ে মলম তৈরি করুন। এটি প্রয়োগ করলে সোরিয়াসিসে উপকার পাওয়া যায়।

ডায়রিয়ায় কালমেঘের ব্যবহারঃ

  • পাথরকুচি, গুডুচি, কালমেঘ এবং কুটকি সমান পরিমাণে মিশিয়ে একটি ক্বাথ তৈরি করুন। এই ক্বাথ ১০ মিলি সেবন করলে ডায়রিয়ায় উপকার পাওয়া যায়।
  • সমান পরিমাণে নাগরমোথা, কালমেঘ এবং চন্দন মিশিয়ে নিন। এর ১০-২০ মিলি ক্বাথ পিত্তজনিত রোগে সৃষ্ট ডায়রিয়ায় উপকারী।

পেটের কৃমির ক্ষেত্রেঃ পেটে কৃমি হলে কালমেঘ পঞ্চাঙ্গের ক্বাথ ১০-২০ মিলি খেলে উপকার পাওয়া যায়।

গর্ভাবস্থায় বমি বন্ধ করতেঃ মহিলারা গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত বমি হওয়ার অভিযোগ করেন। ২ গ্রাম কালমেঘ ও ২ গ্রাম চিনি মিশিয়ে সেবন করলে গর্ভাবস্থায় ঘন ঘন বমি হওয়া বন্ধ করে।

স্তন সংক্রান্ত সমস্যার জন্যঃ পিত্তের কারণে স্তনের ব্যাধিতে হরতকি, বহেরা, আমলকি, নাগরমোথা, কালমেঘ ও কুটকি দিয়ে একটি ক্বাথ তৈরি করুন। এটি ২০-৩০ মিলি পরিমাণে পান করলে উপকার পাওয়া যায়।

প্রদাহ কমাতেঃ যদি ফোলা নিরাময় করতে হয় তবে কালমেঘ ও শুকনো আদা সমান পরিমাণে নিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। এটি ২ গ্রাম কুসুম গরম পানির সাথে খেলে ফোলা উপশম হয়।

জ্বলন্ত সংবেদনেঃ মাটির পাত্রে কালমেঘের পাতা ও ধনে পাতা ছড়িয়ে পানিতে ভিজিয়ে সারারাত রেখে দিন। সকালে রস বের করে হাতে-পায়ে লাগান।

মূত্রনালীর রোগেঃ মূত্রনালীর রোগে ১-২ গ্রাম কালমেঘ পাউডার ১০-২০ মিলি বড় লনির ক্বাথ (Portulaca oleracea) এর সাথে খান। এটি সেবন করলে প্রস্রাবের সমস্যা সেরে যায়।

আরো পড়ুনঃ প্রস্রাবে ইনফেকশনের লক্ষণ, কারণ ও ঘরোয়া প্রতিকার, পিত্তথলির পাথর হওয়ার কারণ, লক্ষণ ও প্রতিকার

পাইলসের চিকিৎসায়ঃ ইন্দ্রায়ব, কালীহারিকাণ্ড, পিপ্পালি, চিত্রকমূল, অপমার্গের বীজ নিন। তাদের সাথে কালমেঘ এবং শিলা লবণ নিন। সবগুলো সমান পরিমাণে মিশিয়ে পাউডার তৈরি করুন এবং গুড় মিশিয়ে নিন। প্রতিদিন সকালে এবং সন্ধ্যায় এটি খান। এটি পাইলস রোগে উপকারী।

রক্তস্বল্পতা এবং জন্ডিসেঃ রক্তশূন্যতা বা জন্ডিসে বাসক পাতা, গুদুচি, হরতকী, বহেরা, আমলকি, সমান পরিমাণে কুটকি, কালমেঘ ও নিমের ছাল মিশিয়ে ক্বাথ তৈরি করুন। এই ক্বাথ ১০-২০ মিলি মধুর সাথে মিশিয়ে পান করলে রক্তশূন্যতা ও জন্ডিসের মতো রোগ সেরে যায়।

যক্ষ্মা রোগেঃ টিবি বা যক্ষ্মা একটি মারাত্মক রোগ হলেও এই রোগে কালামেঘ সেবন করলে খুব উপকার পাওয়া যায়। যক্ষ্মা রোগে ১ গ্রাম কালো মরিচের গুঁড়া ও ২ গ্রাম কালমেঘ মিশিয়ে ১ মাস খেলে টিবি রোগে উপকার পাওয়া যায়।

লিভার সম্পর্কিত রোগ নিরাময়েঃ লিভারের রোগে কালমেঘ ব্যবহার উপকারী। কালমেঘ এর ক্বাথ সেবন করলে লিভার সম্পর্কিত সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায় কারণ কালমেঘে হেপাটোপ্রোটেকটিভ উপাদান রয়েছে যা লিভারের কোষকে রক্ষা করে এবং লিভারকে শক্তিশালী করে।

হৃদরোগেঃ হৃদরোগে কালমেঘের ব্যবহার উপকারী। কারণ একটি গবেষণা অনুসারে, কালমেঘে কার্ডিয়াক প্রতিরক্ষামূলক বৈশিষ্ট্য পাওয়া যায়, যা হৃৎপিণ্ডের পেশীকে শক্তিশালী করে হৃদপিণ্ডের সক্রিয়তা বজায় রাখতে সাহায্য করে।

ক্যান্সারের চিকিৎসায়ঃ কালমেঘের সেবন ক্যান্সারের বিস্তার রোধে সাহায্য করে কারণ কালমেঘের অ্যান্টি-কার্সিনোজেনিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ক।

অনিদ্রা দূর করতেঃ কালমেঘের সেবন আপনার অনিদ্রার সমস্যা কিছুটা হলেও কাটিয়ে উঠতে পারে কারণ, এতে এমন কিছু উপাদান রয়েছে যা ঘুম আনতে সহায়ক।

সাধারণ সর্দি-কাশিতেঃ কালমেঘের সেবন সাধারণ সর্দি নিরাময়ে সাহায্য করে কারণ আয়ুর্বেদ অনুসারে, কালমেঘের কফ উপশমকারী গুণ রয়েছে, যার কারণে এটি কফকে শান্ত করে এবং ঠান্ডায় উপশম দেয়।

ভাইরাল ইনফেকশনেঃ কালমেঘের অ্যান্টিভাইরাল বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা ভাইরাস সংক্রমণের বিস্তার রোধ করে।

সাপের কামড়ের জন্য উপকারীঃ সাপে কামড়ালে কালমেঘের পাতা পিষে সাপের কামড়ের জায়গায় লাগালে উপকার পাওয়া যায়। কালমেঘের পাতার পেস্ট বিচ্ছুর বিষ, ব্যথা ও জ্বালাপোড়াতে উপকারী।

কালমেঘের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াঃ-

কালমেঘ এর উপকারিতা যেমন আছে তেমনি অসুবিধাও আছে । কালমেঘ বেশি পরিমাণে ব্যবহার করলে অথবা বেশি দিন ব্যবহার করল নিম্মক্তো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে-

  • মাথা ঘোরা
  • পেটে ফাঁপা
  • অরুচি
  • বমি
  • হার্টের ব্যাধি
  • গর্ভনিরোধক প্রভাব

আরো পড়ুনঃ

5/5 - (18 votes)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button