স্বাস্থ্য

হরতকি খাওয়ার উপকারিতা কি ও ব্যবহার এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

ত্রিফলার তিনটি ফলের মধ্যে হরতকি অন্যতম। হরতকি আয়ুর্বেদিক ওষুধ হিসেবে প্রচুর ব্যবহৃত হয়। এটি স্বাস্থ্য ও সৌন্দর্যের জন্য খুবই উপকারী। হরতকির ফল, মূল ও ছাল সবই ব্যবহৃত হয়। হরতকি খাওয়ার উপকারিতা কি ও গুণাবলী সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।

হরতকি কি?

হরতকিকে হরদও বলা হয়।

হরতকির বোটানিক্যাল নাম: Terminalia chebula (Gaertn.) Retz. (টার্মিনালিয়া চেবুলা) হরতকি Combretaceae পরিবারের অন্তর্গত।

প্রকৃতির ভিত্তিতে হরতকিকে সাত প্রকারে ভাগ করা হয়েছে।

১। বিজয়া, ২। রোহিণী, ৩। পুতনা, ৪। অমৃতা, ৫। অভয়া, ৬। জীবনন্তী এবং ৭। চেতকী।

তবে বর্তমানে হরতকি  মাত্র তিন ধরনের পাওয়া যায়। এটি সর্বত্র পাওয়া যায়। হরতকি অনেক গুণসম্পন্ন একটি ঔষধি গাছ। এটি মাঝারি আকারের, ২৪-৩০ মিটার উঁচু শাখাযুক্ত গাছ। এর পাতা সরল, চকচকে, উপবৃত্তাকার এবং বর্শা আকৃতির। এর ফল উপবৃত্তাকার বা গোলাকার, যা ১.৮-৩.০ সেমি ব্যাস এবং পাকা অবস্থায় হলুদ থেকে কমলা-বাদামী হয়।

কাঁচা অবস্থায় ছিঁড়ে ফেলা ফলগুলো ছোট হরতকি নামে পরিচিত। অর্ধেক পাকা অবস্থায় ছিন্ন করা ফল হলুদ বর্ণের হয়। এর ফল পূর্ণ পাকলে তাকে বদি হরতকি বলে। প্রতিটি ফলের একটি বীজ থাকে। ফেব্রুয়ারী-মার্চ মাসে এই উদ্ভিদের পাতা ঝরে। এপ্রিল-মে মাসে নতুন কুঁড়ি দিয়ে ফুল ফোটে এবং শীতকালে ফল আসে। জানুয়ারি থেকে এপ্রিল মাসে পাকা ফল পাওয়া যায়। এর বীজ শক্ত, হলুদ রঙের, বড় হাড়ের মতো এবং আকৃতিতে কৌণিক।

হরতকি কোথায় পাওয়া যায় বা জন্মায়?

এই উদ্ভিদ ১৩০০ মিটার উচ্চতা পর্যন্ত পাহাড়ী অঞ্চল এবং বনাঞ্চলে পাওয়া যায়।

হরতকি উপকারি অংশ

হরতকির ফল, পাতা ও পঞ্চাঙ্গ ওষুধ হিসেবে বেশি ব্যবহৃত হয়।

হরতকি কাশি, ডায়াবেটিস, পাইলস (অর্শ), কুষ্ঠ, ফোলা, পেটের অসুখ, কৃমি রোগ, কর্কশতা, ডুওডেনাল (ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম), কোষ্ঠকাঠিন্য, পেট ফাঁপা, আলসার (আলসার বা ঘা), ক্লান্তি, হেঁচকি ইত্যাদি বিভিন্ন রোগ নিরাময়ে সাহায্য করে।

শ্রেষ্ঠ হরতকির বৈশিষ্ট্য

যে হরতকি নতুন, মিষ্টি, শক্ত, গোলাকার, ভারী, লাল রঙের, পানিতে ডুবে যাওয়া, গুড়ের মতো ভাঙা, সামান্য তেতো, বেশি রসযুক্ত, ঘন ছাল, পাকা ও নিজে থেকে ঝরে পড়া। প্রায় ২২-২৫ গ্রাম ওজনের হরতকিকে সর্বোত্তম বলে মনে করা হয়।

ক্ষতিকর/অপরিষ্কার হরতকি

ক্ষতিকর হরতকি যা পোকামাকড় দ্বারা খাওয়া, আগুনে পুড়ে যাওয়া, জলে বা কাদায় পড়ে থাকে, বর্জ্য বা অনুর্বর জমিতে জন্মায়। প্রক্রিয়াবিহীন হরতকি খাওয়া বা ব্যবহার করা উচিৎ নয়।

হরতকি খাওয়ার উপকারিতা ও ব্যবহার

আয়ুর্বেদে হরদ বা হরতকির অনেক গুরুত্ব রয়েছে। একটি ছোট হরতকি থেকে অনেক উপকারিতা পাওয়া যায়।

হরতকি খাওয়ার পদ্ধতি প্রতিটি রোগের জন্য আলাদা। যেমন, সিদ্ধ করে হরতকি খেলে ডায়রিয়া বন্ধ হয়, ভুনা করার পর হরতকি খেলে বুদ্ধি বাড়ে ইত্যাদি।

মাথাব্যথায় হরতকি উপকারীঃ এখনকার মানসিক চাপের জীবনে মাথাব্যথা একটি সাধারণ রোগ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মাথাব্যথা উপশমে হরতকির গুঁড়া পানি দিয়ে মিশিয়ে মাথায় লাগালে উপকার পাওয়া যায়।

খুশকি হ্রাস করুনঃ খুশকির কারণে চুল পড়ে যায়। আমের বীজের গুঁড়া ও ছোট হরতকি চুর্ণ দুধে পিষে মাথায় লাগালে খুশকি কমে যায়।

আরো পড়ুনঃ খুশকি দূর করার ৫টি ঘরোয়া উপায়, লেবু দিয়ে খুশকি দূর করার উপায়

চোখের রোগেঃ প্রায় সারাদিন কম্পিউটারে কাজ করলে চোখে জ্বালাপোড়া ও ব্যথার মতো সমস্যা হয়। সারারাত পানিতে হরতকি ভিজিয়ে রেখে, পানি ছেঁকে নিয়ে সকালে চোখ ধুলে চোখে শীতলতা পাওয়া যায় এবং চোখের রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। প্রতিদিন এভাবে ব্যবহার করলে চোখে আরাম পাওয়া যাবে।

ছানির সমস্যায়ঃ বয়স বাড়ার সাথে সাথে ছানির সমস্যায় সবাই পড়ে। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে হরতকিকে ৩ ঘণ্টা পানিতে ভিজিয়ে রেখে পিষে লাগালে ছানি রোগে উপকার পাওয়া যায়। আবার, হরতকির গুঁড়া ৩ গ্রাম এবং শুকনো আঙুরের পেস্ট ৩ গ্রাম, চিনি বা মধুর সঙ্গে মিশিয়ে প্রতিদিন খাবার আগে খেলে ছানি রোগে উপকার পাওয়া যায়।

তাছাড়া, হরতকির ছাল পিষে লাগালে চোখ থেকে পানি পড়া বন্ধ হয়।

আবার সব ধরনের চোখের রোগে হরতকি ঘি দিয়ে ভেজে চোখের চারপাশের বাইরের অংশে লাগালে উপকার পাওয়া যায়।

ঠাণ্ডার জন্যঃ ঠান্ডার কারণে সবারই সমস্যা হয়। ঠান্ডায় হরীতকী খুবই উপকারী। ঠাণ্ডায় হরতকি ব্যবহার করলে মাথা ব্যথা ও উপশম হয়।

মুখের রোগের জন্যঃ মুখ ও গলার রোগে হরীতকী খুবই উপকারী। হরতকির ক্বাথ বা পাউডার মুখের রোগে উপশম দেয়। ২০-৪০ মিলি হরতকির ক্বাথের মধ্যে ৩-১২ মিলি মধু মিশিয়ে খেলে গলা ব্যথা উপশম হয়।

হরতকির গুঁড়ো দিয়ে ব্রাশ করলে দাঁত পরিষ্কার ও স্বাস্থ্যবান হয়।

আধা লিটার পানিতে ১০ গ্রাম হরতকি সিদ্ধ করে কোয়াটার ক্বাথের মধ্যে সামান্য ফুঁটিয়ে গুলিয়ে গার্গল করলে মুখ ও গলা থেকে রক্ত ​​পড়া বন্ধ হয়।

আরো পড়ুনঃ সুস্বাস্থ্যের জন্য মধু খাওয়ার নিয়ম ও সময়

কাশি থেকে মুক্তি পেতে-

দীর্ঘদিন কফের সমস্যায় ভুগলে এইভাবে ব্যবহার করতে পারেন হরতকি-

কাশি কমাতে প্রতিদিন ২-৫ গ্রাম হরতকি পাউডার খেতে হবে।

হরতকি, বাসক পাতা, কিশমিশ, ছোট এলাচ ১০-৩০ মিলি ক্বাথের মধ্যে মধু ও চিনি মিশিয়ে দিনে তিনবার পান করলে শ্বাসকষ্ট, কাশি এবং রক্তপিত্ত রোগ (নাক-কান থেকে রক্ত ​​পড়া) উপশম হয়।

হজম শক্তি বৃদ্ধিতেঃ খাওয়ার পর হজম না হলে বা এসিডিটির সমস্যা হলে হরতকি খেলে উপকার পাওয়া যায়।

হরতকি গুঁড়ার মধ্যে সমপরিমাণ চিনি/মিছরি ৩-৬ গ্রাম মিশিয়ে সকাল-সন্ধ্যা খাবার পর খেলে হজম শক্তি বৃদ্ধি পায়।

বমি রোধঃ অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাসের কারণে যদি বমি হওয়ার মতো মনে হয়, তাহলে হরতকি ব্যবহার করতে পারেন। ২-৪ গ্রাম হরতকির গুঁড়া মধুর সাথে মিশিয়ে খেলে বমি বন্ধ হয় ।

ক্ষুধা বাড়াতেঃ অনেক সময় দীর্ঘ অসুস্থতার কারণে খাওয়ার ইচ্ছা কমে যায়। এই অবস্থায় হরতকি খাওয়া উপকারী। ২ গ্রাম হরতকি এবং ১ গ্রাম শুকনো আদা গুড়া বা ২৫০ মিলিগ্রাম শিলা লবণের সাথে মিশিয়ে খেলে ক্ষুধা বাড়ে।

হরতকি, পিপ্পালি ও চিত্রক সমান পরিমাণে নিয়ে মিশ্রণ তৈরি করে ১-২ গ্রাম পানির সাথে খেলে খাওয়ার ইচ্ছা বাড়তে থাকে।

ডায়রিয়া বন্ধ করতেঃ যে রোগীর পাতলা পায়খানা হয় বা অল্প অল্প করে যন্ত্রণা সহকারে বের হয়, হরতকি, বড় গন্ধরস ও পিপলির গুঁড়া ২-৫ গ্রাম কুসুম গরম পানির সাথে খেলে উপকার পাওয়া যায় ।

কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি পেতেঃ দীর্ঘদিন ধরে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় ভুগলে হরতকি খেলে আরাম পাওয়া যায়। ১০০ মিলি পানিতে হরতকি এবং সাড়ে তিন গ্রাম দারুচিনি বা লবঙ্গ ১০ মিনিট সিদ্ধ করুন, ছাঁকুন এবং সকালে পান করুন, পেট পরিষ্কার হবে।

অর্শ্বরোগেঃ বর্তমান সময়ের অনিয়মিত জীবনযাত্রার কারণে পাইলস বা অর্শ্বরোগের সমস্যা দেখা দিতে শুরু করেছে। পাইলসের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে হরতকির ক্বাথ তৈরি করে পাইলস ধুয়ে ফেললে উপকার পাওয়া যায়।

জন্ডিসেঃ হরতকি জন্ডিসের চিকিৎসা হিসেবে কাজ করে। হরতকি, হলু্‌দ, ঘি ও মধু সহ ৫০০ মিলিগ্রাম থেকে ১ গ্রাম করে অথবা গুড় ও মধুর সাথে মাত্র ১ গ্রাম হরতকি দিনে ২-৩ বার সেবন করলে জন্ডিসে উপকার পাওয়া যায়।

ডিসুরিয়ার জন্য: প্রস্রাবের অনেক ধরনের সমস্যা যেমন দেরীতে প্রস্রাব হওয়া বা মাঝে মাঝে প্রস্রাব হওয়া, প্রস্রাব করার সময় জ্বালাপোড়া বা ব্যথা ইত্যাদি। এই সব সমস্যায় হরতকি খুবই উপকারী। হরতকি, গোখরু, ধান্যক, যবসা এবং পাষাণ-ভেদা সমপরিমাণে ৫০০ মিলি পানিতে সিদ্ধ করুন। এখন এই ক্বাথের মধ্যে মধু মিশিয়ে সকাল, বিকাল ও সন্ধ্যায় ১০-৩০ মিলি খেলে প্রস্রাবের সমস্যা, মূত্রনালীর জ্বালা ইত্যাদিতে উপকার পাওয়া যাবে।

আরো পড়ুনঃ প্রস্রাবে ইনফেকশনের লক্ষণ, কারণ ও ঘরোয়া প্রতিকার, পিত্তথলির পাথর হওয়ার কারণ, লক্ষণ ও প্রতিকার

ডায়াবেটিসেঃ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে হরতকি চূর্ণ ২-৫ গ্রাম এক চামচ মধুর সঙ্গে সকাল-সন্ধ্যা খেলে ডায়াবেটিস রোগে উপকার পাওয়া যায়।

অণ্ডকোষ বৃদ্ধি বা হাইড্রোসিলেঃ হাইড্রোসিলের সমস্যায় হরতকি খুবই কার্যকরী। ৫০ মিলি ক্যাস্টর অয়েল, ৫ গ্রাম হরতকি এবং ১ গ্রাম কাঁচা কলা দিয়ে রান্না করুন। শুধুমাত্র তেল অবশিষ্ট থাকলে তা ছেঁকে নিন। সকালে এবং সন্ধ্যায় হালকা গরম জলের সাথে অল্প পরিমাণে খান, এটি হাইড্রোসিল কমাতে সহায়তা করে।

টেস্টিকুলার প্রদাহ বা অণ্ডকোষে ফোলাভাবঃ অণ্ডকোষে ফোলাভাব থাকলে ত্রিফলার ক্বাথ সেবন করলে খুব উপকার পাওয়া যায়। ১০-২০ মিলি ত্রিফলার ক্বাথের মধ্যে ১০ মিলি মধু মিশিয়ে পান করলে অণ্ডকোষের ফোলাভাব থেকে আরাম পাওয়া যায়।

ফাইলেরিয়াসিসের জন্যঃ ফাইলেরিয়াসিসের সমস্যা থেকে উপশম পেতে হরতকি ব্যবহার করতে হবে। ৫০ মিলি ক্যাস্টর অয়েলে ১০ গ্রাম হরতকি রান্না করে ৬ দিন পান করলে এই রোগে উপকার পাওয়া যায়।

ক্ষত নিরাময়েঃ ক্ষত শুকাতে হরতকির ব্যবহার খুবই উপকারী। হরতকির ক্বাথ দিয়ে ক্ষত ধুলে দ্রুত সেরে যায়।

আলসারেঃ আলসার শুকাতে হরতকি, ৫-১০ গ্রাম মাখনের মধ্যে মিশিয়ে সেবন করলে উপকার পাওয়া যায়।

কুষ্ঠ রোগেঃ কুষ্ঠরোগের সমস্যা কমাতে এভাবে হরতকি ব্যবহার করতে হবে-

২০-৫০ মিলি পানির সাথে ৩-৬ গ্রাম হরতকির পাউডার সকাল-সন্ধ্যা সেবন করলে উপকার পাওয়া যায়।

সমপরিমাণ হরতকি, তেঁতুল, গুড়, তিলের তেল , মরিচ, শুকনো আদা ও পিপল মিশিয়ে সকাল-সন্ধ্যা ২-৪ গ্রাম করে এক মাস খেলে কুষ্ঠ রোগে উপকার পাওয়া যায়।

সিনকোপের জন্যঃ যদি কোনো রোগের কারণে বা দুর্বলতার কারণে মূর্ছা অনুভূত হয়, তবে হরতকি সেবন করলে সঠিক উপকার পাওয়া যায়। হরতকির ক্বাথ থেকে রান্না করা ঘি খেলে ক্ষয় ও অজ্ঞানতা দূর হয়।

জ্বরের জন্যঃ আবহাওয়ার পরিবর্তনের কারণে যদি বারবার জ্বর আসে, তাহলে হরতকি দিয়ে চিকিৎসা করা যায়-

৩-৬ গ্রাম হরতকি চূর্ণ ১ মিলি তিলের তেল, ১ গ্রাম ঘি ও ২ গ্রাম মধুর সঙ্গে মিশিয়ে খেলে জ্বালাপোড়া, জ্বর, কাশি , নাক-কান থেকে রক্ত ​​পড়া, শ্বাসকষ্ট ও বমি হওয়া ইত্যাদি উপশম হয়।

শুকনো আঙুরের ২৫ মিলিলিটার ক্বাথের মধ্যে ৩ গ্রাম হরতকি গুঁড়ো মিশিয়ে সকাল-সন্ধ্যা সেবন করলে জ্বর থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

হরতকি চূর্ণ ৩-৬ গ্রাম খেলে জ্বরের উপসর্গ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

হরতকির ক্বাথ ১০-৩০ মিলিলিটার সহ ৫ গ্রাম শতপল ঘি খেলে ম্যালেরিয়ায় উপকার পাওয়া যায়।

হেমোপ্টাইসিস বা রক্তপিত্তের জন্যঃ হরতকির গুণাগুণ রক্তের পিত্ত থেকে মুক্তি পেতে খুবই উপকারী।

হরতকি চূর্ণ ৩-৬ গ্রাম, সমপরিমাণ পিপলি গুঁড়ো ও দ্বিগুণ মধু মিশিয়ে খেলে রক্ত ​​পিত্তে উপকার পাওয়া যায়।

হরতকির গুঁড়া ৩-৬ গ্রাম মধুর সঙ্গে মিশিয়ে খেলে রক্ত ​​পিত্ত, ম্যালেরিয়া ও ব্যথা উপশম হয়।

হরতকির গুঁড়া ৬ গ্রাম কিসমিস সমান অংশের সঙ্গে সকাল-সন্ধ্যা সেবন করলে রক্তপাত, চুলকানি, দীর্ঘস্থায়ী জ্বর ইত্যাদি উপশম হয়।

প্রদাহ রোধেঃ কোনো রোগের লক্ষণ হিসেবে হাত-পা ফুলে গেলে নিম্নোক্ত উপায়ে হরীতকী সেবন করলে উপকার পাওয়া যায়-

ফোলা রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির মলত্যাগের সমস্যা হলে হরীতকী চুর্ণে সমপরিমাণ গুড় (প্রতিটি ২-২ গ্রাম) মিশিয়ে খেতে হবে।

কাঁশরিটকি ২-৪ গ্রাম সকাল-সন্ধ্যা সেবন করলে ফোলা ও ব্যথা উপশম হয়।

হরতকি, শুকনো আদা ও দেবদারু কাঠের গুঁড়া সমপরিমাণে বা ত্রিসমা গুটিকা (হরতকি, শুকনো আদা, গুড় সম্ভগা) কুসুম গরম জলে খেলে প্রদাহ দূর হয়।

জ্বরের পর ফুলে ওঠার সমস্যায় হরতকি, মরিচ, শুকনো আদা ও হলুদ সমপরিমাণ করে নিয়ে সকাল-সন্ধ্যা ১০-৩০ মিলি করে পান করলে উপকার পাওয়া যায়।

ত্বক সংক্রান্ত সমস্যায়ঃ ত্বকের সমস্যায় হরতকি উপকারী। এর জন্য ক্ষতস্থানে হরতকির পেস্ট লাগালে ক্ষত দ্রুত সেরে যায়। আয়ুর্বেদ অনুসারে, হরতকিতে রয়েছে বর্ণের গুণ যা ত্বককে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।

যৌন সংক্রান্ত সমস্যায়ঃ হরতকি যৌন সমস্যার লক্ষণ যেমন যৌনবাহিত রোগ (STDs) কমাতে ব্যবহৃত হয়। একটি গবেষণা অনুসারে, হরতকির ব্যবহার যৌন সংক্রমণে উপকারী কারণ এতে অ্যান্টিভাইরাল বৈশিষ্ট্য রয়েছে।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণেঃ ডায়াবেটিসে হরতকি খাওয়া উপকারী, কারণ গবেষণা অনুযায়ী এতে যেমন সুগার নিয়ন্ত্রণের গুণ রয়েছে, তেমনি আয়ুর্বেদের মতে এটি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।

আরো পড়ুনঃ পুরুষদের জন্য অশ্বগন্ধার উপকারিতা, ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা ডায়েট চার্ট ও প্ল্যান, ডায়াবেটিস কমানোর উপায় ও প্রতিকার, প্রাকৃতিক ঔষুধে গ্যাস্ট্রিক দূর করার উপায়

পেটের গ্যাসের জন্যঃ আপনি যদি পেটের গ্যাসের সমস্যায় ভুগে থাকেন তবে হরতকি পাউডার আপনার জন্য সেরা প্রতিকার কারণ হরতকি পেটের নীচের অংশ থেকে গ্যাস বের করতে সাহায্য করে।

ওজন কমানোর জন্যঃ হরতকি শরীরের ওজনের ভারসাম্য বজায় রাখতে ব্যবহার করা যায়, যা শরীর থেকে অবাঞ্ছিত পদার্থগুলি দূর করে শরীরের ওজন এর ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।

ফুসফুসের রোগের জন্যঃ ফুসফুসের সমস্যা দূর করতে হরতকি ব্যবহার করা যায়, কারণ হরতকিতে উষ্ণতা বৃদ্ধির গুণ রয়েছে যা ফুসফুসে জমে থাকা কফ দূর করতে সাহায্য করে।

আমাশয় থেকে মুক্তি পেতেঃ হরতকির ক্যাথারটিক বৈশিষ্ট্যের কারণে, বেশিরভাগ লোকেরা এটি পেট পরিষ্কার করার জন্য ব্যবহার করে তবে এটি আমাশয়ে উপকার দেয়।

চুল পড়া কমানোর জন্যঃ বিখ্যাত আয়ুর্বেদিক ওষুধ ত্রিফলার একটি অংশ হরতকি এবং দুটি অংশ বিভিটকি ও আমলা। চুলের সমস্যার জন্য ত্রিফলা একটি ওষুধ, যা চুলের শক্তি জোগাতে সহায়ক।

আরো পড়ুনঃ চিরতরে চুল পড়া বন্ধ করার উপায়, চুল পড়া বন্ধ ও ঘন করার উপায়

কোলন পরিষ্কারের জন্যঃ যাদের অন্ত্র সঠিকভাবে পরিষ্কার হয় না তাদের জন্য হরতকি ব্যবহার উপকারী, কারণ এতে ক্যাথারসিসের বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা অন্ত্র বা কোলন পরিষ্কার করতে সাহায্য করে।

ছত্রাক সংক্রমণ রোধেঃ একটি গবেষণা অনুসারে, হরতকিতে অ্যান্টিফাঙ্গাল বৈশিষ্ট্য পাওয়া যায়, তাই ছত্রাক সংক্রমণে এটি ব্যবহার উপকারী।

হরতকি কিভাবে ব্যবহার করবেন?

রোগের জন্য হরতকি সেবন ও ব্যবহারের পদ্ধতি আগেই বলা হয়েছে। আপনি যদি কোনো নির্দিষ্ট রোগের চিকিৎসার জন্য হরতকি ব্যবহার করেন, তাহলে অবশ্যই একজন আয়ুর্বেদিক চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী- ১০-৩০ মিলি ক্বাথ এবং ২-৬ গ্রাম হরতকির পাউডার নিতে পারেন।

লবন সহ হরতকি সেবনে কফ, চিনি সহ পিত্ত, ঘি সহ বাত-ব্যাধি এবং গুড় সহযোগে সেবন করিলে সকল রোগ নিরাময় হয়।

যারা হরতকি খেতে চান তারা বর্ষায় লবণের সঙ্গে হরতকি, শরতে চিনি, হেমন্তে শুকনো আদা, শীতকালে পিপলি, বসন্তে মধু ও গ্রীষ্মকালে গুড় খেতে হবে। শুধুমাত্র এটি করলেই আপনি হরতকি সুফল সঠিকভাবে নিতে পারবেন।

হরতকি চুর্ণ বা হরতকির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

নিম্নলিখিত অবস্থায় হরতকি খাওয়া উচিৎ নয়

ক্লান্ত, দুর্বল, উচ্চ পিত্ত এবং গর্ভবতী মহিলাদের হরতকি খাওয়া উচিৎ নয়।

বদহজম, শুকনো খাবার, অত্যধিক সহবাস, মদ্যপান, ক্ষুধা, তৃষ্ণা ও গরমে ভুগছেন এমন ব্যক্তিদের হরতকি খাওয়া উচিৎ নয়।

আরো পড়ুনঃ

5/5 - (15 votes)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button