শিক্ষা

অধ্যবসায় রচনা

মানব জীবনে অধ্যবসায়ের গুরুত্ব অপরিসীম। তাই, অধ্যবসায়ের জীবনভিত্তিক পাঠদানের জন্য আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় এ বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ ভাবে যোগ করা হয়েছে। স্কুল-কলেজের বিভিন্ন পরীক্ষায় অধ্যবসায় রচনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই আপনাদের জন্য রইল অধ্যবসায় রচনা।

অধ্যবসায়

ভূমিকা: কাঙ্ক্ষিত সাফল্য লাভ করার জন্য কোন কাজ একাগ্রভাবে বারবার চেষ্টা বা সাধনা করার নাম অধ্যবসায়। মানুষের জীবনের সুখ-দুঃখ, উথান- পতন, ব্যর্থতা- সফলতা এগুলো অপরিহার্য বিষয়। প্রত্যেকটা মানুষের জীবনে ব্যর্থতার পাশাপাশি সফলতা থাকে। প্রথমেই যে কোন কাজে সফলতা আসবে এমন কোন কথা নেই। তাই আমাদের ভেঙে পড়লে চলবে না। আমরা জানি Life means struggle, জীবন মানেই সংগ্রামময়। আর এই সংগ্রামের মধ্য দিয়েই একদিন সাফল্যের স্বর্ণ শিখরে আরোহন করা সম্ভব। তাইতো কবির ভাষায় –

“পারিব না এ কথাটি বলিও না আর
একবার না পারিলে দেখো শতবার”

কবির এই উদ্দীপনা মূলক বাণী আমাদের সাহস যোগায়। অধ্যবসায় ছাড়া পৃথিবীতে কোন মহৎ কাজই সাধিত হয় না।

অধ্যবসায়ের গুরুত্ব: মানুষ হিসেবে কেবল বেঁচে থাকাকে জীবনের সার্থকতা বলা যায় না। আর চেষ্টা ছাড়া মানুষের জীবনে সফলতা বা সার্থকতা আসে না। জীবন মানেই কাজ আর কাজের সমাহার হলো এই পৃথিবীতে। আর জ্ঞান ছাড়া কোন কাজই সম্পন্ন করা যায় না তাই কাজের সঙ্গে জ্ঞানের ও সংযোগ থাকা লাগবে। পৃথিবীতে অধ্যবসায় ছাড়া সাফল্য লাভ করেছে এমন কোন ব্যক্তি নেই। অধ্যবসায়ী ও পরিশ্রমী হলে জীবনের সুখ, সফলতা ও পরিপূর্ণতা আনতে পারবে। তাই মানব জীবনে অধ্যবসায়ের গুরুত্ব অপরিসীম। অধ্যবসায়হীন ব্যক্তি জীবনে কখনো সফল হতে পারেনা। ইংরেজিতে একটি কথা আছে –

” Failure is the pillar of ‘success “
অর্থ : ব্যর্থতা সফলতার চাবিকাঠি

মানুষের জীবনে চলার পথে বাধা-বিপত্তি আসবেই। এই বাধা বিপত্তি অতিক্রম করে অধ্যবসায় এর মাধ্যমে এগিয়ে যেতে হবে। আর সব সময় মনে করতে হবে জীবনের প্রথম ব্যর্থতা কে কারণ এটাই সফলতার প্রথম সিঁড়ি। মানুষ অসাধ্যকে সাধন করতে পারে ও ব্যর্থতাকে জয় করতে পারে শুধুমাত্র অধ্যবসায়ের গুণে। মানব জীবনের প্রতিটি ধাপে অধ্যবসায়ের গুরুত্ব অপরিসীম।

অধ্যবসায় কিঃ সফলতা অর্জন করার জন্য বারবার চেষ্টা করার নামই হলো অধ্যবসায়। অধ্যবসায় শব্দের অর্থ হলো চেষ্টা বা সাধনা করা। ইংরেজিতে একটি কথা আছে ‘try again and again ‘। অধ্যবসায়ের মাধ্যমে সর্বক্ষেত্রেই সফলতা অর্জন করা যায়। অধ্যবসায়ের মূল হলো দৃঢ় মনোবল। প্রথম চেষ্টাতেই সহজ কাজ শেষ করে ফেলা যায়। কঠিন কাজের সফলতার মধ্যে মানুষের জীবনের সফলতা নির্ভর করে। আর এই কঠিন কাজের সফলতার জন্য অধ্যবসায় প্রয়োজন। অধ্যবসায় মানে দৃঢ় পরিশ্রম ও ধৈর্য। মানুষের চরিত্রের অন্যান্য গুণাবলী ও দৃঢ় মনোবল ধারণ করে আত্মনিয়োগ করে যখন কাজে লাগানো হয় তখন অধ্যবসায়ের পরিচয় পাওয়া যায়। ডা.লুৎফর রহমানের উক্তিতে –

“সাধনার কোন কোন ব্যাপারে যদি প্রথমবারে ব্যর্থ মনোরথ হও, তবে তড়িৎ যেওনা -বারে বারে আঘাত করো দুয়ার ভেঙ্গে যাবে “

অধ্যবসায়ের প্রয়োজনীয়তাঃ মানব জীবনে অধ্যবসায়ের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। কারণ অধ্যবসায় ছাড়া মানুষের জীবনে উন্নতি সম্ভব নয়। অধ্যবসায়হীন ব্যক্তি জীবনে সবার থেকে পিছিয়ে পড়ে ।সব কাজে অধ্যবসায়ের প্রয়োজন আছে। মানব জীবনে অধ্যবসায় হল সাফল্যের চাবিকাঠি। অধ্যবসায়ের মাধ্যমে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করাই জীবনের লক্ষ্য। জীবনে সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য কঠিন পথকে সহজ করার জন্য অধ্যবসায়ের প্রয়োজন। মানুষ ভালো ও সুখে শান্তিতে থাকতে চায়। কিন্তু এই ভালো থাকার উপকরণ কারোর জন্য তৈরি করা থাকে না। মানুষকে তার যোগ্যতা দিয়ে অর্জন করে নিতে হয়। আর এর জন্য চাই অধ্যবসায়। অধ্যবসায় ছাড়া কোন জাতি ও দেশ উন্নতির শিখরে পৌঁছাতে পারেনা। তাই জাতি দেশের মঙ্গল প্রতিষ্ঠা করার জন্য প্রত্যেক নাগরিককে অধ্যবসায়ী হতে হবে। অধ্যবসায়ী ব্যক্তির কাছে কোন কিছুই অসম্ভব নয়।

“সবচেয়ে কঠিন কাজ শক্তি দিয়ে নয়
বরং অধ্যবসায়ের দ্বারা সম্পাদিত হয়”

মানব সভ্যতায় অধ্যবসায়ঃ আমাদের পূর্বপুরুষদের অধ্যবসায়ের ফলে আজকের এই সভ্য জগৎ আমরা পেয়েছি। এক সময় পৃথিবী ছিল মানুষের বসবাসের অনুপযোগী। বনচর জন্তুুর মত মানুষ ছিল। তখন তাদের ভাষা, পরিবার, রাষ্ট্র, সমাজ ইত্যাদি কোন কিছুই ছিল না। গুহাবাসী মানবদের অধ্যবসায়ের গুনে আজ সভ্যতা চরম পর্যায়ে আহরণ করছে। যুগ যুগ ধরে মনীষীদের জ্ঞানের সমন্বয়ে ও অধ্যবসায়ের গুনে আজ প্রকৃতি এসেছে মানুষের হাতের মুঠোয় । এর ধারাবাহিকতায় চলতে থেকে পৃথিবী আজ সভ্যজগতে পৌঁছেছে । এখন মানুষ উন্নত বিলাসবহুল জীবন যাপন করছে। এইসবের সবই সম্ভব হয়েছে অধ্যবসের মাধ্যমে।

ছাত্র জীবনে অধ্যবসায়ঃ ছাত্র জীবনে অধ্যবসায়ের গুরুত্ব অপরিসীম। কারণ তারাই ভবিষ্যতের কর্ণধার । ছাত্র জীবনই হল জীবন গড়ার মূল সময়। ছাত্র জীবনে যারা সময়ের মূল্য দিতে পারবে তারাই জীবন গড়তে পারবে। ছাত্র জীবনে যারা অধ্যবসায়ের মাধ্যমে সফল হতে পারবে তারাই জীবনে সাফল্য অর্জন করতে পারবে। আর ছাত্র জীবনকে যারা অবহেলায় ও অলস ভাবে অতিক্রম করবে তারাই জীবনে ব্যর্থ হবে। ছাত্রজীবনে অধ্যবসায় ছাড়া জীবনের কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব নয়। একজন খারাপ ছাত্র ভালো ও মেধাবী ছাত্রতে পরিণত হতে পারে শুধুমাত্র ধৈর্য ও কঠিন অধ্যবসায়ের ফলে। একজন অধ্যবসায়ী ছাত্র অল্প মেধাবী হলেও জীবনে সফল হতে পারবে। ইংরেজিতে একটি প্রবাদ আছে –

“Practice makes a man perfect “

ছাত্র জীবন হলো জীবন গঠনের বীজ বপণের সময়। অধ্যবসায়ী ছাত্ররা জীবনে প্রতিষ্ঠিত হয়ে গৌরবময় আসনে অধিষ্ঠিত হয়।

মনীষীদের জীবনে অধ্যবসায়ঃ পৃথিবীতে যারা মানুষের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা লাভ করেছেন এবং আদর্শ ব্যক্তিেত্বর ছিলেন তারা প্রত্যেকেই ছিলেন অধ্যবসায়ী। জ্ঞানেন্দ্রমোহন দাস ২০ বছরের সাধনায় রচনা করেন ‘বাংলা ভাষার অভিধান ‘। মহাকবি ফেরদৌসীর অমর মহাকাব্য ‘শাহনামা ‘ দীর্ঘ ৩০ বছরের কাব্য প্রয়াস। কোন প্রতিষ্ঠানের সহায়তা ছাড়াই একক প্রচেষ্টায় প্রায় ২০০০ প্রাচীন পুঁথি সংগ্রহ করেন খ্যাতনামা সংগ্রাহক আব্দুল করিম সাহিত্য বিশারদ। স্কটল্যান্ড এর রাজা রবার্ট ব্রুস পরপর ছয়বার ইংরেজদের সঙ্গে যুদ্ধে পরাজিত হয়েও হাল ছাড়েননি এবং শেষ পর্যন্ত তিনি জয়ী হয়েছিলেন । বিশ্ববিশ্রুত বিজ্ঞানী নিউটনের অকুন্ঠ স্বীকৃতি :বিজ্ঞানে তার অবদানের মূলে আছে বহু বছরের একনিষ্ঠ সাধনা ও নিরবিচ্ছিন্ন পরিশ্রম। অধ্যবসায় ছাড়া কখনো কোনো মানুষ সফল হতে পারে না।

ব্যক্তি জীবনে অধ্যবসায়ের গুরুত্বঃ ব্যক্তি জীবনে অধ্যবসায়ের গুরুত্ব অনেক। শক্তি সব মানুষের সমান নয়। কিন্তু জীবনের তাগিদে উন্নত জীবনের জন্য সবারই চেষ্টা করা প্রয়োজন। শক্তির স্বল্পতা সাফল্যের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায় না যদি সে অধ্যবসায়ের সঠিক প্রয়োগ করতে পারে। পৃথিবীতে সবাই প্রতিভা নিয়ে জন্মগ্রহণ করে তবে কারো প্রতিভা প্রকাশ পায় আবার কারোরটা পায়না । যাদের প্রতিভা প্রকাশ পায় না তাদের প্রয়োজন কঠোর পরিশ্রম ও সাধনা। মানব চরিত্রের এক উৎকৃষ্ট গুণ হলো অধ্যবসায়। ব্যক্তির পূর্ণাঙ্গ ব্যক্তিত্ব বিকাশের জন্য প্রয়োজন কাজের আগ্রহ , বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগ এবং সুদূর সংকল্প । জীবনে কোন কিছুই সহজ নয়। অধ্যবসায়ের মাধ্যমে সবকিছুই পূরণ করা সম্ভব। আমাদের ব্যক্তি জীবনে অধ্যবসায়ের গুরুত্ব অপরিসীম।

অধ্যবসায় জীবনের চিরায়ত সংগ্রামী শক্তিঃ ধৈর্য সহকারে বারবার চেষ্টা করাই হচ্ছে অধ্যবসায়। কোন কাজে অধ্যবসায়ী হওয়া মানে জীবন দিয়ে সংগ্রাম করা। জীবনের প্রতিটি ধাপে অধ্যবসায় ও সংগ্রামের মধ্য দিয়ে অর্জনের পথরেখা আমাদের সামনে হাজির হবে।

অধ্যবসায়হীন ব্যক্তির পরিণামঃ অধ্যবসায়হীন ব্যক্তির পরিণাম ব্যর্থতা ও আফসোসে পরিপূর্ণ। যাদের জীবনে অধ্যবসায় নেই, তাদের জীবন ব্যর্থতায় পরিপূর্ণ। অধ্যবসায়হীন মানুষ জীবনে সাফল্য লাভ করতে পারে না। একসময় তাদের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যায় । মানুষ পৃথিবীতে অমরত্ব লাভ করতে পারে একমাত্র অধ্যবসায়ের গুণে।

উপসংহারঃ পরিশেষে এ কথা বলা যায়, যেকোনো কাজে সাফল্য লাভের জন্য আমাদের অধ্যবসায়ী হতে হবে। আমাদের সকলের উচিত অধ্যবসায়কে আঁকড়ে ধরা। কেননা অধ্যবসায় ছাড়া জীবনের কখনোই সকল অর্জন সম্ভব নয়। অধ্যবসায়ের গুনে আজ ছেঁড়া ন্যাকড়ার পৃথিবী এখন সোনার পুতুল। অধ্যবসায়ের মাধ্যমে জীবনকে প্রতিষ্ঠিত করা আমাদের সকলের লক্ষ্য হওয়া উচিত। Chamfort -এর উক্তিতে –

“Success makes success or,
money makes money”

ইতিহাস থেকে জানা যায় পৃথিবীর অধিকাংশ জ্ঞানী -গুণী, দার্শনিক, বিজ্ঞানী, পন্ডিতরাই ছিলেন চাষাভূসা, শ্রমিক, দর্জি, মুচি ইত্যাদি গরিব লোকের সন্তান। পৃথিবীতে তারা প্রত্যেকেই বড় হয়েছেন শুধু অধ্যবসায়ের শক্তিতে। অধ্যবসায়ের জন্য প্রয়োজন আত্মবিশ্বাস ও সুদৃঢ় মনোবল।

“ভেঙ্গে যাবে বাঁধন
ভাঙবে না তবু প্রত্যয় সাধন
ভাঙবে না কভু সৃজন মনন
ধিক! শত প্রলস মহা প্রলয়
দীপ্ত বাড়ি বাহুতে উরাও আজি
আত্মার মহা বিজয় “।

5/5 - (11 votes)

Sajjad Hossain

When I'm not immersed in the world of content creation, you'll find me actively engaging with the online community. I believe in the power of collaboration and learning from shared experiences. Let's connect on [social media platform] for real-time updates, discussions, and a glimpse into the exciting journey of online earning.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button