স্কিন কেয়ার

মধুর ফেসপ্যাক দিয়ে ব্রণ দূর করার উপায়

নারী হোক বা পুরুষ, প্রায় সবাই চায় একটি পরিষ্কার এবং দাগহীন মুখ, কিন্তু অনেক সময় লক্ষ চেষ্টার পরেও কিছু কারণে মুখে দাগ পড়ে। তাই, আজ আমরা এই পোস্টে ব্রণ দূর করতে মধুর মতো সহজ এবং প্রাকৃতিক উপাদান সম্পর্কে তথ্য দিচ্ছি। পাঠকরা জানতে পারবেন কীভাবে সহজেই ব্রণ থেকে মুক্তি পেতে মধুর ফেসপ্যাক ব্যবহার করবেন। এর পাশাপাশি, কীভাবে মধুর ফেসপ্যাক ব্রণ দূর করার জন্য উপকারী হতে পারে সে সম্পর্কেও পাঠকরা জানতে পারবেন।

আসুন, এবার সরাসরি ব্রণ দূর করতে মধুর মুখের মাস্ক সম্পর্কে জেনে নিই।

Contents

ব্রণ থেকে মুক্তি পেতে মধু কীভাবে উপকারী?

ব্যাকটেরিয়া, ত্বকে তৈরি হওয়া অতিরিক্ত তেল, বিভিন্ন প্রসাধনী ও চুলের পণ্যের কারণে মুখে ব্রণ হয়। মধুতে উপস্থিত অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য ব্রণের ব্যাকটেরিয়া দূর করতে এবং ব্রণ নিরাময়ে সহায়ক। এই কারণেই বিভিন্ন প্রসাধনী পণ্যেও মধু ব্যবহার করা হয়।

NCBI (ন্যাশনাল সেন্টার ফর বায়োটেকনোলজি ইনফরমেশন) ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি গবেষণায় মধু ব্রণের জন্য উপকারী প্রমাণিত হয়েছে। গবেষণা চলাকালীন, ব্রণ নিরাময়ের জন্য কিছু লোকের মুখে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল সাবান ব্যবহার করা হয়েছিল। এছাড়াও, অন্য গ্রুপের লোকেরা ব্যাকটেরিয়ারোধী সাবান দিয়ে মুখ ধোয়ার পর কানুকা মধু (এক ধরনের মধু) ব্যবহার করত। 12 সপ্তাহ পরে, এটি পাওয়া গেছে যে যারা অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল সাবানের সাথে ত্বকের জন্য মধু ব্যবহার করেছেন তাদের উন্নতি বেশি হয়েছে। এমতাবস্থায় বলা যায় যে মধুতে উপস্থিত অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল গুণাবলী ব্রণর বিরুদ্ধে লড়াই করতে এবং কমাতে কার্যকরী।

ব্রণ দূর করার উপায়ঃ মধুর ফেসপ্যাক

নীচে আমরা ব্রণ থেকে মুক্তি পেতে মধুর ফেস মাস্ক সম্পর্কে বিস্তারিত বলব। আপনার যদি ফেসপ্যাকটিতে উপস্থিত উপাদানগুলিতে অ্যালার্জি না থাকে তবে সেগুলি ব্রণ থেকে মুক্তি পেতে ব্যবহার করুন।

বেকিং সোডা এবং মধু ফেসপ্যাক

উপাদান:

  • দুই চামচ মধু
  • 1 চা চামচ বেকিং সোডা (খাবার)

ব্যবহারবিধি: উভয় উপাদান ভালোভাবে মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। এবার এই তৈরি পেস্টটি ব্রণের ওপর লাগান। এটি দুই থেকে তিন মিনিটের জন্য রেখে দিন এবং তারপর আপনার আঙুল দিয়ে হালকা ম্যাসাজ করে মুছে ফেলুন। এরপর কুসুম গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন।

কতটা লাভজনক: মধুতে উপস্থিত অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য ব্রণের জন্য দায়ী ব্যাকটেরিয়া দূর করতে কাজ করে। এছাড়াও মধুতে প্রদাহ বিরোধী বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা ব্রণ নিরাময়ে সাহায্য করে। একই সময়ে, বেকিং সোডা ব্যবহার করে ব্রণের কারণে সৃষ্ট সংক্রমণও দূর করতে পারে এর অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য। ব্রণ সারানোর পাশাপাশি এই মধুর ফেসপ্যাকটি ত্বকের দাগও কমাতে পারে।

হলুদ এবং মধুর ফেসপ্যাক

উপাদান:

  • 1 চা চামচ জৈব মধু বা সাধারণ মধু
  • এক চিমটি হলুদ গুঁড়ো

ব্যবহারবিধি: দুটোই ভালো করে মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। প্রস্তুতকৃত পেস্টটি ব্রণের উপর লাগান এবং 15 থেকে 20 মিনিটের জন্য রেখে দিন। তারপর কুসুম গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন।

কতটা লাভজনক: আয়ুর্বেদে ওষুধ হিসেবে হলুদ ব্যবহার করা হয়। এর অ্যান্টিসেপটিক এবং নিরাময় বৈশিষ্ট্যের কারণে, এটি অনেক সমস্যার চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়। হলুদে উপস্থিত কারকিউমিনের রয়েছে প্রদাহরোধী এবং অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্য। এই উভয় বৈশিষ্ট্যই ব্রণ এবং ব্রণ নিরাময় করতে পারে। এছাড়াও, হলুদ ত্বকে উজ্জ্বলতা আনতে পারে। বর্তমানে এ বিষয়ে আরও গবেষণা প্রয়োজন। কিছু লোকের হলুদে অ্যালার্জি হতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে প্যাচ টেস্ট করার পরই এই ফেস মাস্ক ব্যবহার করুন।

মধু এবং দারুচিনি ফেসপ্যাক

উপাদান:

  • এক থেকে দুই চা চামচ মধু
  • এক চামচ দারুচিনি

ব্যবহারবিধি: মধু এবং দারুচিনি মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। এবার এই পেস্টটি ব্রণ বা সারা মুখে ভালো করে লাগান। পেস্টটি লাগানোর পরে, এটি 15 থেকে 20 মিনিটের জন্য রেখে দিন। সবশেষে পুরো মুখ ধুয়ে মুছে নিন। যদি কারো দারুচিনিতে অ্যালার্জি থাকে তবে এই প্যাকটি ব্যবহার করবেন না।

আরো পড়ুনঃ এলার্জি দূর করার উপায়, দারুচিনির উপকারিতা ও অপকারিতা এবং খাওয়ার নিয়ম

কতটা লাভজনক: মধু এবং দারুচিনির মিশ্রণও ব্রণের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। উভয়টিতে উপস্থিত অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য ব্রণ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া দূর করতে কাজ করে। এই ব্যাকটেরিয়াগুলির মধ্যে রয়েছে প্রোপিওনিব্যাকটেরিয়াম ব্রণ এবং স্ট্যাফিলোকক্কাস এপিডার্মিডিস।

আপেল সিডার ভিনেগার এবং হানি ফেসপ্যাক

উপাদান:

  • 2 টেবিল চামচ জৈব মধু
  • চা চামচ আপেল সিডার ভিনেগার
  • আধা চা চামচ জল
  • সুতি পশম

ব্যবহারবিধি: আপনার ত্বককে আর্দ্র করুন এবং আপনার সারা মুখে মধু লাগান। মধু লাগানোর পর প্রায় পাঁচ থেকে সাত মিনিট মুখে ম্যাসাজ করুন। ম্যাসাজ করার পর 30 থেকে 40 মিনিট পর হালকা গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। মুখ শুষ্ক না হওয়া পর্যন্ত আপেল সিডার ভিনেগারের সাথে পানি মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করুন। এবার তুলোর সাহায্যে মুখে টোনার হিসেবে লাগান। এই মিশ্রণটি শুকিয়ে গেলে মুখে ময়েশ্চারাইজার লাগান।

কতটা লাভজনক: আপেল সিডার ভিনেগার এবং মধু উভয়ই কার্যকর অ্যান্টি-একনে হিসেবে কাজ করতে পারে। প্রকৃতপক্ষে, ত্বকের পিএইচ স্তরও ব্রণের কারণ। এমন পরিস্থিতিতে ত্বকে মধু দিয়ে ম্যাসাজ করার পর অ্যাপেল সিডার ভিনেগার লাগালে ব্রণ দূর হয়, কারণ অ্যাপেল সিডার ভিনেগার ত্বকের পিএইচ ভারসাম্য বজায় রাখতে কাজ করে। এছাড়াও, মধুতে উপস্থিত অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য ব্রণ প্রতিরোধে উপকারী।

মধু এবং দুধের ফেসপ্যাক

উপাদান:

  • 1 টেবিল চামচ মধু
  • 1 চা চামচ দুধ

ব্যবহারবিধি: একটি পাত্রে মধু এবং দুধ যোগ করুন এবং ভালভাবে মেশান। এবার এই মিশ্রণটি আক্রান্ত ত্বকে লাগান। ত্বকে চার থেকে পাঁচ মিনিট ম্যাসাজ করুন। ম্যাসাজ করার প্রায় 20 থেকে 30 মিনিট পর মুখ ধুয়ে ফেলুন।

কতটা লাভজনক: দুধ এবং মধু দিয়ে তৈরি ফেস মাস্ক ব্রণ থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করে। দুধে উপস্থিত অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য ব্রণের ব্যাকটেরিয়া দূর করতে কাজ করে। এর পাশাপাশি, দুধে উপস্থিত ল্যাকটিক অ্যাসিড ব্রণের কারণে সৃষ্ট দাগ দূর করতে কাজ করে। ব্রণ নিরাময়ের পাশাপাশি এই মাস্ক ত্বকের দাগ সারাতেও সাহায্য করতে পারে।

ওটস এবং মধুর ফেসপ্যাক

উপাদান:

  • 1 কাপ রান্না করা ওটমিল/ওটস
  • 1 থেকে 2 চা চামচ মধু

ব্যবহারবিধি: পানিতে রান্না করা ওটমিলে মধু যোগ করুন এবং এটি ভালভাবে মেশান। এবার ওটমিল ঠান্ডা হয়ে গেলে আঙ্গুল দিয়ে মুখে লাগান। প্রায় 20-30 মিনিট পর হালকা গরম জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

কতটা লাভজনক: ব্রণ থেকে মুক্তি পেতে ওটস এবং মধুর মিশ্রণও ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে উপস্থিত অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি এবং ক্লিনজিং বৈশিষ্ট্য ব্রণ নিরাময়ে সাহায্য করে। এছাড়াও, ওটসে উপস্থিত প্রশান্তিদায়ক এজেন্ট ব্রণ দ্বারা সৃষ্ট চুলকানি উপশম করতে সাহায্য করে। এর পাশাপাশি, মধুতে পাওয়া অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য ব্রণ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া দূর করতে সহায়ক।

অ্যালোভেরা এবং মধু

উপাদান:

  • 1 টেবিল চামচ অ্যালোভেরা জেল
  • 1 টেবিল চামচ মধু

ব্যবহারবিধি: একটি পাত্রে মধু এবং অ্যালোভেরা জেল ভালো করে মিশিয়ে নিন। এবার এই মিশ্রণটি ব্রণ আক্রান্ত স্থানে লাগান। প্রায় 10 মিনিট পর হালকা গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন।

কতটা লাভজনক: অ্যালোভেরা প্রাচীনকাল থেকেই সৌন্দর্যের জন্য ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এতে উপস্থিত অ্যান্টিসেপটিক বৈশিষ্ট্য ত্বকে ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি রোধ করতে পারে। এছাড়াও, এটিতে অ্যান্টি-একনে বৈশিষ্ট্যও রয়েছে, যা ব্রণ থেকে রক্ষা করে। অতএব, মধু এবং ঘৃতকুমারী দিয়ে তৈরি এই মিশ্রণটি উভয় পদার্থের বৈশিষ্ট্যের কারণে ব্রণ থেকে মুক্তি দেয় বলে বিশ্বাস করা হয়। এছাড়াও, এই ফেসপ্যাকটি মুখের তরুণ রাখতেও কাজ করতে পারে।

জায়ফল এবং মধু ফেসপ্যাক

উপাদান:

  • 1 চা চামচ জায়ফল গুঁড়া
  • 1 চা চামচ মধু

ব্যবহারবিধি: মধুতে জায়ফল গুঁড়ো মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন এবং ভালো করে মিশিয়ে নিন। এবার এই মিশ্রণটি ব্রণের দাগ বা পুরো মুখে লাগান। প্রায় 30 মিনিট পর মুখ ধুয়ে ফেলুন।

কতটা লাভজনক: জায়ফল তার অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল, অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্যের সাথে এর সুগন্ধযুক্ত গন্ধের জন্যও পরিচিত। এই সম্পত্তিটি ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সৃষ্ট ব্রণ দূর করতে পারে এবং সেইসাথে তাদের বৃদ্ধি রোধ করতে পারে। ব্রণ থেকে মুক্তি পেতে দইয়ের সাথে জায়ফলও ব্যবহার করা যেতে পারে।

সামুদ্রিক লবণ এবং মধু ফেসপ্যাক

উপাদান:

  • 1 চা চামচ মধু
  • 1 চা চামচ সমুদ্রের লবণ (সমুদ্রের লবণ)
  • 1 চা চামচ গরম জল

ব্যবহারবিধি: একটি পাত্রে সমস্ত উপাদান রাখুন এবং ভালভাবে মেশান। এবার এই মিশ্রণটি ব্রণ আক্রান্ত ত্বকে লাগান। প্রায় 10 মিনিট পর ত্বক ধুয়ে ফেলুন।

কতটা লাভজনক: মধু এবং সামুদ্রিক লবণের মিশ্রণও ব্রণ নিরাময়ে ব্যবহার করা যেতে পারে। এটি ত্বককে অতিরিক্ত তেল শোষণ করতে সাহায্য করতে পারে, যা মুখে ব্রণ প্রতিরোধ করে। ত্বক শুষ্ক হলে বা ত্বকে কোনো দাগ থাকলে তা লাগানো থেকে বিরত থাকুন।

নারকেল তেল এবং মধুর ফেসপ্যাক

উপাদান:

  • 1 চা চামচ ভার্জিন নারকেল তেল বা সাধারণ নারকেল তেল
  • 1 চা চামচ কাঁচা মধু বা সাধারণ মধু

ব্যবহারবিধি: একটি পাত্রে মধু ও নারকেল তেল নিয়ে ভালো করে মিশিয়ে নিন। এবার এই পেস্টটি ব্রণের জায়গায় লাগান। প্রায় 15 মিনিট পর মুখ ধুয়ে ফেলুন।

কতটা লাভজনক: ভিটামিন-ই এবং অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল যৌগগুলি নারকেল তেলে পাওয়া যায়, তাই এটি ব্রণ প্রতিরোধ করতে এবং এর দাগের চিকিৎসার জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে। কয়েক ফোঁটা নারকেল তেল মধুর সঙ্গে মিশিয়ে লাগালে ব্রণ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। যদিও এটি ব্যবহার করার আগে একটি প্যাচ পরীক্ষা করতে ভুলবেন না।

চা গাছের তেল এবং মধুর ফেসপ্যাক

উপাদান:

  • 1 টেবিল চামচ মধু
  • চা গাছের তেল 2-3 ফোঁটা

ব্যবহারবিধি: মধুতে চা গাছের তেল যোগ করুন এবং ভালভাবে মেশান। এই মিশ্রণটি মুখে সমানভাবে লাগান। প্রায় 10 থেকে 12 মিনিট পর মুখ ধুয়ে ফেলুন।

কতটা লাভজনক: চা গাছের তেল এবং মধুতে উপস্থিত ঔষধি গুণাবলী ব্রণ প্রতিরোধ ও চিকিৎসায় সাহায্য করতে পারে। একটি গবেষণায়, চা-গাছের তেল এবং এর জেল হালকা থেকে মাঝারি ব্রণের চিকিৎসায় উপকারী বলে বিবেচিত হয়েছে। আসলে, চা গাছের তেলে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য পাওয়া যায়, যা ব্রণ নিরাময় করতে পারে।

রসুন এবং মধুর ফেসপ্যাক

উপাদান:

  • রসুনের 3 কোয়া
  • দেড় চা চামচ মধু
  • এক চিমটি হলুদ গুঁড়ো

ব্যবহারবিধি:

রসুনের খোসা ছাড়িয়ে পেস্ট তৈরি করুন। এবার মধু ও হলুদ গুঁড়ো মিশিয়ে ভালো করে মিশিয়ে নিন। মিশ্রণটি প্রস্তুত হওয়ার পরে, এটি ব্রণ-আক্রান্ত স্থানে লাগান। প্রায় 8 থেকে 10 মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন।

কতটা লাভজনক: রসুনে রয়েছে অ্যালিসিন, যা একটি অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল যৌগ। এটি ত্বককে জীবাণুমুক্ত রাখতে এবং ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া মেরে ফেলতে কাজ করে। অ্যান্টি-একনে জেল তৈরিতেও রসুনের হাইড্রোক্লোরিক নির্যাস ব্যবহার করা হয়। আসলে, এটিতে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এই বৈশিষ্ট্যগুলির কারণে, এটি ব্রণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে এবং এর লক্ষণগুলি কমাতে সাহায্য করতে পারে। রসুনের শক্তিশালী বৈশিষ্ট্য কিছু মানুষকে সমস্যায় ফেলতে পারে। তাই রসুন ব্যবহারের আগে একটি প্যাচ টেস্ট করে নিন।

গ্রিন টি এবং হানি ফেসপ্যাক

উপাদান:

  • 1টি সবুজ চা ব্যাগ
  • 1 চা চামচ মধু
  • প্রয়োজন হিসাবে ফুটন্ত জল

ব্যবহারবিধি: গ্রিন টি ব্যাগ গরম পানিতে কয়েক মিনিট ভিজিয়ে রাখুন। এবার টি ব্যাগটি পানি থেকে বের করে ঠান্ডা হতে দিন।
টি ব্যাগ ঠাণ্ডা হলে খুলে নিন এবং এর থেকে পাতা বের করে নিন। এই চা পাতায় মধু যোগ করে একটি পেস্ট তৈরি করুন। এবার গ্রিন টি এর ক্বাথ দিয়ে মুখ ভালো করে ধুয়ে নিন। মুখ ধোয়ার পর ব্রণে চা পাতা ও মধু মিশিয়ে পেস্ট করুন। 15 থেকে 20 মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন।

কতটা লাভজনক: গ্রিন টি-তে উপস্থিত পলিফেনল ব্রণ নিরাময়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। এই বৈশিষ্ট্যটি ত্বকে সিবামের (গ্রন্থি থেকে এক ধরনের তৈলাক্ত নিঃসরণ) নিঃসরণ কমায়। এটি ব্রণ নিরাময় বা উপশম করতে পারে। এছাড়াও, সবুজ চায়ে অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা ব্রণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করতে পারে ।

মধু এবং লেবুর ফেসপ্যাক

উপাদান:

  • 1 টেবিল চামচ মধু
  • আধা চা চামচ লেবুর রস
  • চা চামচ চিনি (ঐচ্ছিক)

ব্যবহারবিধি: একটি পাত্রে মধু এবং লেবুর রস যোগ করুন এবং ভালভাবে মেশান। এই মিশ্রণটি মুখে লাগিয়ে ৩০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। এটিকে স্ক্রাব হিসেবে ব্যবহার করতে এতে সামান্য চিনি যোগ করা যেতে পারে।

কতটা লাভজনক: ব্রণ এবং পিম্পল হল সবচেয়ে সাধারণ ত্বকের ব্যাধি যা মুখের পাশাপাশি পিছনে এবং অন্যান্য অংশকে প্রভাবিত করে। অন্যান্য অনেক ঘরোয়া প্রতিকারের মতো, লেবু ব্রণের চিকিৎসার জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে।

প্রকৃতপক্ষে, এতে উপস্থিত ফ্ল্যাভোনয়েড অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টিফাঙ্গাল কার্যকলাপ প্রদর্শন করে। এই কারণেই তারা ত্বকে ব্যাকটেরিয়া বাড়তে দেয় না, যা ব্রণ থেকে মুক্তি দেয়। এছাড়াও, লেবুতে উপস্থিত সাইট্রাস অ্যাসিড প্রোপিওনিব্যাকটেরিয়াম ব্রণ বৃদ্ধি করতে দেয় না। লেবুর এই গুণটি ত্বককে ব্রণ থেকে রক্ষা করে। লেবু এবং মধু উভয়ই ত্বকে উজ্জ্বলতা আনতে পারে

টমেটো এবং মধু ফেসপ্যাক

উপাদান:

  • 1 টেবিল চামচ টমেটো পিউরি
  • 2 চা চামচ মধু

ব্যবহারবিধি: টমেটো পিউরিতে মধু যোগ করুন এবং ভালভাবে মেশান। আক্রান্ত স্থানে মিশ্রণটি ভালোভাবে লাগান। হালকা হাতে কয়েক মিনিট মুখে ম্যাসাজ করুন। ম্যাসাজ করার প্রায় 10 মিনিট পরে ত্বক ধুয়ে ফেলুন।

কতটা লাভজনক: টমেটো ব্রণ নিরাময়ে এবং তাদের দাগ কমাতে উপকারী। এর পেস্ট ছিদ্র সঙ্কুচিত করতে কাজ করে। এটি ত্বকে উপস্থিত অতিরিক্ত তেল কমাতেও কাজ করে। প্রকৃতপক্ষে, এতে অনেক উপকারী ভিটামিনের পাশাপাশি অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা ত্বককে ব্রণ থেকে রক্ষা করতে পারে এবং ত্বককে সুস্থ রাখতে পারে। এর সাথে, টমেটোতে উপস্থিত লাইকোপিন ত্বকের ক্ষতি থেকেও রক্ষা করতে পারে, যা ইউভি রশ্মি (সূর্যের ক্ষতিকারক রশ্মি) দ্বারা সৃষ্ট হয়।

নিম এবং মধুর ফেসপ্যাক

উপাদান:

  • ১ মুঠো নিম পাতা
  • 10-12টি তুলসী পাতা
  • 1 থেকে 2 চা চামচ মধু

ব্যবহারবিধি: নিম পাতাগুলিকে রোদে শুকিয়ে নিন যতক্ষণ না সেগুলি খাস্তা হয়ে যায়। এবার শুকনো পাতা পিষে মিহি গুঁড়ো তৈরি করুন। একটি পাত্রে প্রয়োজনমতো গুঁড়ো নিয়ে তাতে মধু মিশিয়ে নিন। এই পেস্টটি পর্যাপ্ত পরিমাণে ব্রণ আক্রান্ত স্থানে লাগান। পাঁচ থেকে সাত মিনিট পর মুখ ধুয়ে ফেলুন।

কতটা লাভজনক: নিম গাছের প্রতিটি অংশ ত্বক, স্বাস্থ্য এবং রোগ প্রতিরোধক সমস্যার চিকিৎসায় ঐতিহ্যগত ওষুধে ব্যবহার করা হয়েছে। নিম পাতায় অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা ব্রণ থেকে মুক্তি দিতে পারে।

NCBI-তে প্রকাশিত একটি সমীক্ষা অনুসারে, নিমের ইথানল নির্যাস ব্যবহার করে একটি অ্যান্টি-ব্রণ প্যাক তৈরি করা যেতে পারে। এ সময় নিমের সঙ্গে গ্রিন-টি, তুলসীসহ আরও অনেক উপাদান ব্যবহার করা হয়। এই সমীক্ষায় দেখা গেছে যে এই অ্যান্টি-ব্রণ সূত্রটি প্রোপিওনিব্যাক্টেরিয়াম এবং স্ট্যাফিলোকক্কাস এপিডার্মিসের (ব্যাকটেরিয়া যা ব্রণ এবং এর সংক্রমণ ঘটায়) এর বিরুদ্ধে সফলভাবে কাজ করেছে।

লাল চন্দন এবং মধু ফেসপ্যাক

উপাদান:

  • 2 চা চামচ লাল চন্দন গুঁড়া
  • 2 চা চামচ মধু
  • ১ চা চামচ পানি

ব্যবহারবিধি: একটি পেস্ট তৈরি করতে, একটি পাত্রে সমস্ত উপাদান রাখুন এবং এটি ভালভাবে মেশান। এবার পুরো মুখে এবং ব্রণ আক্রান্ত স্থানে লাগান। মিশ্রণটি শুকিয়ে গেলে ধুয়ে ফেলুন।

কতটা লাভজনক: লাল চন্দন পাউডার ব্রণ কমাতে সাহায্য করতে পারে সেইসাথে এর দাগও। এতে পাওয়া অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি এবং কুলিং প্রপার্টি ব্রণের কারণে প্রদাহ ও ব্রণ কমাতে কাজ করে। এটিতে একটি অ্যান্টিসেপটিক এজেন্টও রয়েছে, যা ব্রণ দ্বারা সৃষ্ট পুঁজ-ভরা লাল ঘা থেকে মুক্তি দেয়।

অলিভ অয়েল এবং হানি ফেসপ্যাক

উপাদান:

  • 2 টেবিল চামচ মধু
  • 2 টেবিল চামচ ভার্জিন অলিভ অয়েল
  • প্রয়োজন মত গরম জল
  • সুতি পশম

ব্যবহারবিধি: মধু ও অলিভ অয়েল ভালো করে মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করুন। এবার একটি ওয়াশক্লথ এবং তুলা গরম পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। প্রথমে অলিভ অয়েল ও মধুর মিশ্রণ আক্রান্ত স্থানে লাগিয়ে পাঁচ মিনিট ম্যাসাজ করুন। ম্যাসাজ করার পরে, জল থেকে তুলা বা ওয়াশক্লথ তুলে মুখ মুছুন।

কতটা লাভজনক: অলিউরোপেইন, অলিভ অয়েলে উপস্থিত একটি ফেনোলিক যৌগ, এতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি এবং অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল কার্যকলাপ পাওয়া গেছে। এই তিনটি বৈশিষ্ট্যই ব্রণ নিরাময়ে সাহায্য করে।

অ্যাসপিরিন এবং মধুর ফেসপ্যাক

উপাদান:

  • 2 থেকে 3 টি অ্যাসপিরিন ট্যাবলেট
  • আধা চা চামচ মধু
  • প্রয়োজন মত জল

ব্যবহারবিধি: অ্যাসপিরিন ট্যাবলেট গুঁড়ো করে পাউডার তৈরি করুন। এবার এতে মধু ও পানি মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। এই মিশ্রণটি ব্রণ আক্রান্ত স্থানে লাগান। প্রায় 10 মিনিট পরে অ্যাসপিরিন মাস্কটি ধুয়ে ফেলুন।

কতটা লাভজনক: অ্যাসপিরিনে উপস্থিত স্যালিসিলিক অ্যাসিড ব্রণের চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত হয়। এটি ব্রণ এবং প্রদাহ কমাতে উপকারী।

মধু এবং চিনির ফেসপ্যাক

উপাদান:

  • 1 টেবিল চামচ মধু
  • 1 চা চামচ ব্রাউন সুগার বা সাদা চিনি

ব্যবহারবিধি: চিনিতে মধু যোগ করুন এবং ভালভাবে মেশান। চিনি গলে যাওয়ার আগে ব্রণ আক্রান্ত স্থানে মধু ও চিনির মিশ্রণ লাগান। প্রায় 15 মিনিট পর হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

কতটা লাভজনক: মধু এবং চিনির মিশ্রণকে সেরা স্ক্রাব এবং মাস্ক হিসাবে বিবেচনা করা হয়। লোকেরা বিশ্বাস করে যে এটি ত্বকে উপস্থিত তেল দূর করতে পারে, যা ব্রণ থেকে মুক্তি দেয়। এর কোনো প্রমাণ না থাকলেও মধু ও চিনির ব্যবহার ত্বকের জন্য ভালো বলে বিবেচিত হয়েছে। এছাড়াও, এটি ব্রণ নিরাময়ের বিকল্প হিসাবে ব্যবহার করা যায়।

দ্রষ্টব্য: আপনার যদি হালকা বা মাঝারি ব্রণ থাকে তবে এই ঘরোয়া প্রতিকার কাজ করতে পারে। একই সঙ্গে ব্রণ তীব্র হলে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। এছাড়াও, উপরে তালিকাভুক্ত কোনো উপাদান থেকে আপনার অ্যালার্জি থাকলে ব্যবহার করবেন না।

আসুন এখন দেখে নেওয়া যাক ফেসপ্যাক লাগানোর সময় কী কী সতর্কতা অবলম্বন করা দরকার।

সতর্কতা: ব্রণ থেকে মুক্তি পেতে মধুর ফেসপ্যাক ব্যবহার করার আগে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন। যত্ন না নিলে ব্রণ নিরাময়ের পরিবর্তে বাড়তে পারে। তাই ফেসপ্যাক ব্যবহার করার সময় নিচের বিষয়গুলো মাথায় রাখুন।

ত্বকে স্ক্রাবিং করলে হালকা হাতে আলতো করে স্ক্রাব করুন। কারণ ব্রণের কারণে ত্বক স্ফীত হওয়ার পাশাপাশি সংবেদনশীলও হয়।

হলুদ ব্যবহার করার সময় খেয়াল রাখবেন এটা যেন বেশি না লাগে। এতে করে ত্বকে হলুদের হলুদ দাগ থেকে যেতে পারে।

দারুচিনি বা অন্য কোনো পদার্থ ব্যবহার করবেন না যার প্রতি আপনার অ্যালার্জি আছে।

আপেল সিডার ভিনেগার অ্যাসিডিক, তাই সবসময় জল যোগ করার পরেই এটি ব্যবহার করুন।

ব্রণ থেকে মুক্তি পেতে মধুর ফেসপ্যাক ব্যবহারের পর ত্বকে জেল ভিত্তিক ময়েশ্চারাইজার লাগাতে ভুলবেন না।

ব্রণ দূর করতে, শুধুমাত্র মধুর মুখের মাস্ক লাগানোর সময় ব্রাশ বা হালকা হাতে ব্যবহার করুন। ত্বকে কোনো চাপ প্রয়োগ করবেন না।

নারকেল তেলযুক্ত ফেসপ্যাক ব্যবহার করা সমস্ত ত্বকের জন্য উপযুক্ত নয়। যে ব্যক্তি প্যাকটি প্রয়োগ করছেন তার ত্বক যদি খুব তৈলাক্ত হয়, তাহলে তার এটি ব্যবহারে ব্রণ বাড়তেও পারে। তাই আপনার ত্বক অনুযায়ী ফেসপ্যাক বেছে নিন।

রসুন ব্যবহার করলে ত্বকের জ্বালা হতে পারে। তাই অতিরিক্ত পরিমাণে রসুন ব্যবহার করবেন না।

ত্বকে কোনো ধরনের কাটা বা ক্ষত থাকলে টমেটো বা রসুন ব্যবহার করবেন না।

এছাড়াও, ব্রণ দূর করতে মুখে মধুর ফেসপ্যাক ব্যবহার করার আগে একটি প্যাচ পরীক্ষা করুন। পরীক্ষাটি বাহুতে বা হাতে করা যেতে পারে।

আপনি ইতিমধ্যে জানেন কিভাবে আপনি ব্রণ পরিত্রাণ পেতে মধুর ফেসপ্যাক ব্যবহার করতে পারেন। এইমাত্র, আপনার ত্বকের ধরন এবং সংবেদনশীলতার কথা মাথায় রেখে, আপনি নিবন্ধে দেওয়া 20টি মধুর মুখোশের যে কোনো একটি ব্যবহার করতে পারেন। আমরা আমাদের ত্বকের যত্ন নেওয়ার মাধ্যমে চিরকাল উজ্জ্বল রাখতে আশা করি। আপনার বন্ধুদের সাথে এই নিবন্ধটি শেয়ার করতে ভুলবেন না। আপনার একটি পদক্ষেপ তাদের ব্রণ এবং এর দাগ কমাতে সাহায্য করতে পারে।

সচরাচর জিজ্ঞাস্য:

সারা রাত মধু লাগালে কি ব্রণ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়?

না, মধু ব্যবহার করে রাতারাতি ব্রণ থেকে মুক্তি পাওয়া যায় না। এটি নিয়মিত রাতে ব্যবহার করলে ব্রণের সমস্যা অনেকাংশে কমতে পারে।

সারারাত কি মুখে মধু লাগানো যাবে?

হ্যাঁ, মধু সারারাত মুখে লাগাতে পারেন। তবে এতে সমপরিমাণ পানি মেশানো থাকে। ত্বকে সরাসরি মধু লাগালে আঠালো হতে পারে। এ কারণেই শুষ্ক ত্বকের মানুষদের সমপরিমাণ পানিতে মধু মিশিয়ে প্রয়োগ করার পরামর্শ দেওয়া হয়।

আরো পড়ুনঃ

4.4/5 - (7 votes)

Momtahina Momo

I’m Momtahina Momo, a writer at Shopnik who loves diving into the world of health, beauty, and technology. I enjoy creating content that helps readers live healthier, feel more confident, and stay connected with modern trends. Whether it’s a beauty hack, a wellness routine, or a tech tip, I’m here to share ideas that make everyday life better.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button