প্রেগন্যান্সি

গর্ভাবস্থায় দারুচিনি খাওয়া যাবে কি?

আমরা আমাদের খাদ্য তৈরিতে অনেক ধরনের মশলা ব্যবহার করি, যা স্বাদের পাশাপাশি স্বাস্থ্যের জন্যও উপকারী। তার মধ্যে একটি হল দারুচিনি। দারুচিনিতে পাওয়া পুষ্টিগুণ স্বাস্থ্যের জন্য নানাভাবে উপকারী, কিন্তু গর্ভাবস্থায় কি এটি খাওয়া যাবে?

এই পোস্টে আমরা বলব গর্ভাবস্থায় দারুচিনি খেলে কী হতে পারে এবং কীভাবে একজন গর্ভবতী মহিলা তার ডায়েটে দারুচিনি অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন।

আসুন প্রথমে জেনে নিই গর্ভাবস্থায় দারুচিনি খাওয়া উচিত কি না।

গর্ভাবস্থায় দারুচিনি খাওয়া কি নিরাপদ?

হ্যাঁ, গর্ভাবস্থায় পরিমিত মাত্রায় দারুচিনি গ্রহণ করা যাবে। এই বিষয়ে অনেক গবেষণা হয়েছে, যাতে এটি নিশ্চিত করা হয়েছে যে গর্ভাবস্থায় দারুচিনি খেলে পেটের অসুখ এবং ডায়াবেটিসের মতো অনেক সমস্যা কাটিয়ে উঠা যায়।

জেনে নিন গর্ভাবস্থায় কতটা দারুচিনি খাওয়া নিরাপদ।

গর্ভাবস্থায় কি পরিমাণ দারুচিনি খাওয়া নিরাপদ?

গর্ভাবস্থায় ডায়েটে যে পরিমাণ দারুচিনি অন্তর্ভুক্ত করা উচিত তা মূলত প্রতিটি গর্ভবতী মহিলার স্বাস্থ্যের উপর নির্ভর করে। এ বিষয়ের ওপর করা একটি গবেষণায় বলা হয়েছে যে, ০.৫ গ্রামের কম দারুচিনি গর্ভাবস্থায় ব্যবহার করা নিরাপদ হতে পারে। অপর একটি গবেষণা অনুযায়ী, প্রতি কেজি ওজনের শরীরের জন্য এটি প্রতিদিন ০.৭ মিলিগ্রাম পর্যন্ত ব্যবহার করা যেতে পারে। তবুও, এটি খাওয়ার আগে একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা ভাল।

আসুন এখন জেনে নিই গর্ভাবস্থায় কখন দারুচিনি খাবেন।

গর্ভাবস্থায় দারুচিনি খাওয়ার উপযুক্ত সময় কখন?

একটি গবেষণা অনুসারে, দারুচিনি গর্ভাবস্থার যেকোনো ত্রৈমাসিকে খাওয়া যায়। গর্ভাবস্থায় দারুচিনি ফোলাভাব এবং পেটের ব্যথা উপশম করতে ব্যবহার করা যায়। আবার, এটি ওষুধ হিসাবে সীমিত পরিমাণে ব্যবহার করা যেতে পারে, তবে এটি ব্যবহার করার আগে আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করতে ভুলবেন না।

এরপর আমরা বলছি দারুচিনির পুষ্টিগুণ সম্পর্কে।

দারুচিনির পুষ্টিগুণ

দারুচিনিতে যে পুষ্টি উপাদান পাওয়া যায় তা আমাদের শরীরের জন্য অপরিহার্য। এতে পাওয়া বিভিন্ন পুষ্টিসমূহ নিম্নরূপ:

পুষ্টি উপাদানপ্রতি ১০০ গ্রাম দারুচিনি
শক্তি ২৪৭ কিলোক্যালরি
প্রোটিন ৩.৯৯ গ্রাম
ফ্যাট১০২৪ মিলিগ্রাম
ফাইবার৫৩.১ মিলিগ্রাম
কার্বোহাইড্রেট ৩.৪ মিলিগ্রাম
ভিটামিন-এ ৩.৮ মিলিগ্রাম
ভিটামিন-সি১৫ মিলিগ্রাম
ফোলেট৬ মিলিগ্রাম
ক্যালসিয়াম ১০০২ মিলিগ্রাম
আয়রন৮.৩২ মিলিগ্রাম

এখন আমরা বলছি গর্ভাবস্থায় দারুচিনি খেলে কী কী উপকার পাওয়া যাবে।

গর্ভাবস্থায় দারুচিনির খাওয়ার উপকারিতা

গর্ভাবস্থায় দারুচিনি খাওয়ার ফলে বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য উপকারিতা পাওয়া যায়, যা নিম্নরূপ:

পেট ফোলা এবং ব্যথা থেকে মুক্তি:

গর্ভাবস্থায় পেট ফোলা এবং পেটে ব্যথা উপশম করতে দারুচিনি ব্যবহার করা যেতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে যে, দারুচিনির রেচক (মল সহজ করে) এবং শিথিল করার বৈশিষ্ট্য রয়েছে।

গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে : কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে, দারুচিনি গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত মহিলাদের ইনসুলিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। গর্ভকালীন ডায়াবেটিস সহ ৫১ জন রোগীর উপর একটি গবেষণায় দেখা গেছে, গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের সময় মহিলাদের দারুচিনি ক্যাপসুল দেওয়াতে রক্তে উপস্থিত গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণে কাজ করে।

উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করুন: গর্ভাবস্থায় উচ্চ রক্তচাপকে স্বাভাবিক হিসাবে বিবেচনা করা হয় যতক্ষণ না গর্ভবতী কোনো চিকিৎসারত অবস্থায় থাকে। দারুচিনি উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে প্রভাব দেখায়, যদি এটি সীমিত পরিমাণে গ্রহণ করা হয়।

অ্যাসিডিটি উপশম করুন : কোষ্ঠকাঠিন্য, বদহজম, বমি বমি ভাব এবং বমি হচ্ছে গর্ভাবস্থার সাধারণ লক্ষণসমূহ। দারুচিনিতে অ্যান্টিঅ্যাসিড বৈশিষ্ট্য পাওয়া যায়, যা অ্যাসিডিটির সমস্যার পাশাপাশি কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে উপশম দেয়।

ভাল হজমের জন্য : একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, দারুচিনির ব্যবহার হজম সংক্রান্ত সমস্যায় সাহায্য করতে পারে। এর পাশাপাশি এতে কারমিনেটিভ বৈশিষ্ট্য পাওয়া যায়, যা গ্যাসের সমস্যাও দূর করতে পারে।

কোলেস্টেরলের সমস্যা : একটি গবেষণায় বলা হয়েছে, কোলেস্টেরলের সমস্যায় দারুচিনির ব্যবহার উপকারী। এটি মোট কোলেস্টেরল, লো-ডেনসিটি লাইপোপ্রোটিন (LDL) এবং ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা কমাতে সাহায্য করতে পারে।

পরের অংশে, আমরা গর্ভাবস্থায় দারুচিনি খাওয়ার অপকারিতাগুলো বলছি।

গর্ভাবস্থায় দারুচিনি খাওয়ার অপকারিতা

অতিরিক্ত পরিমাণে দারুচিনি খাওয়ার ফলে অনেক সমস্যা হতে পারে, যা নিম্নরূপ:

১. কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে, দারুচিনিতে কুমারিন নামক একটি রাসায়নিক রয়েছে, যার অতিরিক্ত মাত্রায় লিভারের সমস্যা হতে পারে।

২. দারুচিনি থেকে প্রাপ্ত অপরিহার্য তেল খাওয়া কিছু গর্ভবতী মহিলাদের মধ্যে জ্বালা এবং অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে।

৩. দারুচিনি ফ্লেভারিং এজেন্ট রয়েছে এমন পণ্য খাওয়ার ফলে কিছু মানুষ এর মুখে ঘা অনুভব করেছে।

৪. পরিপূরক আকারে দারুচিনি গ্রহণ এড়িয়ে চলুন। কারণ এতে কিছু ঝুঁকি রয়েছে, যেমন- ঘাম, পেটের রোগ, হৃদস্পন্দন বৃদ্ধি এবং রক্তে শর্করার মাত্রা কমে যাওয়া।

৫. বেশি করে দারুচিনি খেলে মুখে, নাকে ও গলায় জ্বালাপোড়া সহ কাশির সমস্যা হতে পারে। এর সাথে আরও ক্ষতিকর উপসর্গ গুলোর মধ্যে গুরুতর কাশি, বমি, নাক দিয়ে রক্ত ​​পড়া এবং বুকে ব্যাথা হওয়া অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।

এখন জেনে নিন দারুচিনি খাওয়ার সময় কী কী সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।

দারুচিনি খাওয়ার সময় যেসব সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে

দারুচিনি খাওয়ার সময় কিছু বিষয় মাথায় রাখা জরুরি। এখানে আমরা এমন কিছু সতর্কতা সম্পর্কে বলছি:

  • অ্যালার্জির সমস্যা থাকলে দারুচিনি খাওয়া উচিত নয়।
  • গর্ভবতী মহিলাদের লিভারের সমস্যা থাকলে দারুচিনি খাওয়া উচিত নয়।
  • দারুচিনির একটি গরম প্রভাব রয়েছে, তাই এটি শুধুমাত্র অল্প পরিমাণে খাওয়া উচিত। এ ব্যাপারে চিকিৎসকের পরামর্শ নিলে ভালো হবে।
  • নাক দিয়ে রক্ত ​​পড়ার সমস্যা থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়েই সেবন করুন।
  • কোনো ক্ষতিকারক প্রভাব এড়াতে শুধুমাত্র সেরা মানের দারুচিনির ছাল বা গুঁড়া কিনুন।
  • চিকিৎসকদের মতে, কোনো গর্ভবতী নারী যদি রক্ত ​​পাতলা করার ওষুধ খান, তাহলে তার বেশি দারুচিনি ব্যবহার করা উচিত নয়। আসলে, এটি শরীরে প্লেটলেটের সংখ্যা হ্রাস করে গর্ভাবস্থায় জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।

প্রবন্ধের এই অংশে আমরা বলছি কিভাবে দারুচিনি খাওয়া যায়।

কিভাবে আপনি আপনার খাদ্যতালিকায় দারুচিনি অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন?

ডায়েটে দারুচিনি অন্তর্ভুক্ত করার অনেক উপায় রয়েছে। এখানে আমরা কিছু বিশেষ পদ্ধতি সম্পর্কে বলছি:

  • খাবারে হালকা মশলা হিসেবে দারুচিনি ব্যবহার করা যেতে পারে।
  • দুধের সাথে দারুচিনি গুঁড়ো মিশিয়ে খেতে পারেন।
  • হালকা গরম পানিতে দারুচিনির গুঁড়া মিশিয়ে খেতে পারেন।
  • মধুর সাথে মিশিয়ে খেলে মুখের অনেক সমস্যা দূর করা যায়।
  • ভেষজ চা হিসেবে দারুচিনি ব্যবহার করা যায়।
  • এর ক্যাপসুল সাধারন পানি দিয়ে খাওয়া যায়।
  • এটি চুলের জন্যও উপকারী। দারুচিনি সিদ্ধ করার পর অবশিষ্ট পানি দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলতে পারেন।
  • চ্যবনপ্রাশ তৈরিতে দারুচিনি ব্যবহার করা যায়।

এখিন আপনি জানলেন যে, সীমিত পরিমাণে ব্যবহৃত দারুচিনি কীভাবে গর্ভাবস্থায় উপকারী হতে পারে। এছাড়াও, আপনি এখানে এর অপকারিতা এবং ব্যবহার সম্পর্কেও জানলেন। আপনি যদি ওষুধ হিসাবে দারুচিনি ব্যবহার করতে চান তবে প্রথমে আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন। একই সময়ে, আপনি যদি এটি খাওয়ার কারণে কোনও সমস্যা অনুভব করেন তবে অবিলম্বে এটি খাওয়া বন্ধ করুন এবং ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন। আমরা আশা করি যে, এই পোস্টে দেওয়া তথ্য আপনার জন্য উপকারী হবে। আপনি গর্ভাবস্থায় খাদ্য সম্পর্কে আরও তথ্যের জন্য আমাদের অন্যান্য পোস্ট গুলোও পড়তে পারেন।

আরও পড়ুনঃ

3.5/5 - (4 votes)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button