প্রেগন্যান্সি

গর্ভাবস্থায় বরই খাওয়ার উপকারিতা এবং অপকারিতা

গর্ভাবস্থায় কী খাবেন আর কী খাবেন না এই ব্যাপারে এখনকার মায়েরা অনেক সতর্ক হয়ে গেছেন। সতর্কতার পাশাপাশি মায়েদের জানা উচিত গর্ভাবস্থায় শরীরের জন্য পর্যাপ্ত পুষ্টিও প্রয়োজন। এই পুষ্টি মা ও শিশু উভয়ের বিকাশের জন্য অপরিহার্য। আপনি যদি একজন সতর্ক মা হন এবং ভাবছেন যে আপনি গর্ভাবস্থায় বরই খেতে পারবেন কি না, তাহলে অবশ্যই এই পোস্টটি পড়ুন।

এই পোস্টে, আমরা বরইতে উপস্থিত পুষ্টি উপাদান এবং এটি গর্ভাবস্থায় খাওয়া যাবে কিনা সে বিষয়ে তথ্য দিব। এছাড়াও, এই পর্যায়ে বরই কি পরিমাণ সেবন করা যাবে এবং এর উপকারিতা ও অপকারিতা নিয়েও আলোচনা করব। গর্ভাবস্থায় বরই সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এই লিখাটি পড়তে থাকুন।

আসুন প্রথমে জেনে নিই গর্ভাবস্থায় বরই খাওয়া নিরাপদ কি না।

গর্ভাবস্থায় বরই খাওয়া কি নিরাপদ?

গর্ভাবস্থায় বরই খাওয়া নিরাপদ হিসেবে ধরা হয়। কারণ, এটি সহজে হজম হয় এবং শরীর ঠান্ডা রাখতে কাজ করে। এর পাশাপাশি এটি অতিরিক্ত তৃষ্ণা ও বমির মতো সমস্যা কমাতেও সাহায্য করতে পারে। বিশেষত বরই সেবন গর্ভাবস্থায় পেটের ব্যথায় উপশম দিতে পারে। গর্ভাবস্থার জন্য প্রয়োজনীয় আয়রন, প্রোটিন, শক্তি এবং ক্যালসিয়াম এর মতো অনেক প্রয়োজনীয় পুষ্টি বরইতে রয়েছে।

বরই খাওয়ার সময় মনে রাখবেন যে, এটি পরিমিত পরিমাণে খাওয়া হলে শরীরের জন্য নিরাপদ হবে। অতিরিক্ত যেকোন কিছুই শরীরের ক্ষতি করতে পারে।

গর্ভাবস্থায় দিনে কতগুলো বরই খাওয়া উচিত?
শুধু গর্ভাবস্থাই নয়, যেকোনো সময় যেকোনো ধরনের খাবার অতিরিক্ত খাওয়া ক্ষতিকর হতে পারে। একই জিনিস বরই এর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। এই কারণে, এটি বলা হয় যে, দিনে ১০ টি পর্যন্ত বরই খাওয়া উচিত। চীনের দ্য হিলিং কুইজিন বইটিতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ২০ টি বরই গর্ভাবস্থায় টনিক হিসাবে ব্যবহার করা যেতে পারে। বিভিন্ন গবেষণার উপর ভিত্তি করে, গর্ভাবস্থায় প্রায় ১৫ গ্রাম তাজা বরই খাওয়া যেতে পারে। বরই অন্যান্য ফলের সাথে মিশিয়েও খাওয়া যায়। তবে, সবার গর্ভধারণ এক রকম হয় না। এমন পরিস্থিতিতে, বরই খাওয়ার পরিমাণে পরিবর্তন হতে পারে। এ বিষয়ে একবার চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া ভালো।

এখন আমরা আপনাকে গর্ভাবস্থায় কোন সময়ে বরই খাওয়া উচিত সে সম্পর্কে বলছি।

গর্ভাবস্থায় বরই খাওয়ার সঠিক সময় কী?
গর্ভাবস্থায় বরই খাওয়ার সঠিক সময় স্পষ্ট নয়। এ কারণে, কোন সময়ে এটি খাওয়া ভালো তা বলা মুশকিল। তবে, সম্পূর্ণ গর্ভাবস্থা জুড়ে বরই সুষম পরিমাণে খেলে এটি নিরাপদ হিসেবে বিবেচিত হবে। তবে, প্রত্যেকের গর্ভাবস্থা আলাদা। তাই প্রতিটি গর্ভবতী মহিলার নতুন কিছু খাওয়ার আগে একবার তার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা উচিত। গর্ভধারণ সংক্রান্ত জটিলতার কথা মাথায় রেখে চিকিৎসক সঠিক তথ্য দিতে পারবেন।

চলুন এবার জেনে নেওয়া যাক বরই এর পুষ্টিগুণ সম্পর্কে।

বরই এর পুষ্টিগুণ

বরইতে ভিটামিন, মিনারেলের মতো পুষ্টি উপাদান রয়েছে যা গর্ভাবস্থায় উপকারী। বরইতে উপস্থিত কিছু পুষ্টিসমূহ নিম্নরূপ-

পুষ্টি উপাদানপ্রতি ১০০ গ্রাম বরইতে
পানি৭৭.৮৬ গ্রাম
প্রোটিন১.২ গ্রাম
শক্তি৭৯ কিলোক্যালরি
কার্বোহাইড্রেট২০.২৩ গ্রাম
ক্যালসিয়াম ২১ মিলিগ্রাম
ভিটামিন-এ ৪০ মিলিগ্রাম
ভিটামিন-সি৬৯ মিলিগ্রাম
ফসফরাস ২৩ মিলিগ্রাম

আমরা আরও বলছি বরই খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে।

গর্ভাবস্থায় বরই খাওয়ার উপকারিতা

গর্ভাবস্থায় বরই খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানতে নিচে পড়ুন-

১. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে- গর্ভাবস্থায় বরই খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। প্রকৃতপক্ষে, বরইতে উপস্থিত পলিস্যাকারাইড নামক উপাদানগুলো ইমিউনোমোডুলেটরি প্রভাব প্রদর্শন করতে পারে, যা রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করে শরীরের কার্যক্ষমতা বাড়াতে পারে।

২. পেটের ব্যথায় উপকারী- শারীরিক পরিবর্তনের কারণে গর্ভাবস্থায় পেটে ব্যথার সমস্যা দেখা দিতে পারে। বরই এই ব্যথা কমাতে সাহায্য করতে পারে।

৩. দুধ পরিষ্কার করে- এটা বিশ্বাস করা হয় যে, মায়ের দুধে কিছু ক্ষতিকারক পদার্থ তৈরি হয়, যা শিশুর জন্য ক্ষতিকারক। এই কারণে, গর্ভবতী এবং স্তন্যদানকারী মায়েদের বরই খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। এটি বুকের দুধে ক্ষতিকারক পদার্থের গঠন প্রতিরোধ করে।

৪. বমি বমি ভাব দূর করে– বরই খেলে গর্ভাবস্থায় বমি বমি ভাবের সমস্যা কমে যায়। একটি গবেষণায় বলা হয়েছে যে, খোসা ছাড়ানো শুকনো বরই খেলে বমি বমি ভাব দূর হয়।

৫. বমি থেকে মুক্তি– গর্ভাবস্থায় যদি বমি হয় তবে এই সমস্যা কমাতে বরই খাওয়া যাবে। শুকনো ও খোসা ছাড়ানো বরই খেলে বমি কিছুটা উপশম হয়।

এবার জেনে নেওয়া যাক গর্ভাবস্থায় বরই খাওয়ার ক্ষতি সম্পর্কে।

গর্ভাবস্থায় বরই খাওয়ার অপকারিতা

বরই খাওয়ার অপকারিতা প্রায়শই এর অতিরিক্ত খাওয়ার কারণে হয়। আমরা নীচে গর্ভাবস্থায় বরই এর ক্ষতি সম্পর্কে বলছি-

১. ঘাম হওয়া – বলা হয় যে, প্রচুর পরিমাণে বরই খেলে অতিরিক্ত ঘাম হয়। অতিরিক্ত ঘামের ফলে অস্থিরতা এবং নার্ভাসনেস হতে পারে। এই কারণে, এটি অত্যধিক খাওয়া এড়াতে পরামর্শ দেওয়া হয়।

২. ওষুধের উপর প্রভাব – যদিও বলা হয় যে বরই এর ওষুধের উপর কোনও খারাপ প্রভাব নেই। তবে একটি গবেষণা অনুসারে, বরই এনজাইম সম্পর্কিত ওষুধের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

৩. হাই ব্লাড সুগার- তাজা এবং শুকনো বরই উভয়েরই একটি প্রাকৃতিক মিষ্টি থাকে। এই কারণে, এটি পরামর্শ দেওয়া হয় যে যাদের হাই ব্লাড সুগার এর সমস্যা রয়েছে তাদের এটি খাওয়া উচিত নয়। এর ভিত্তিতে বলা যায় যে, গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস থাকলে গর্ভবতীর বরই খাওয়া উচিত নয়।

আমরা আরও বলছি গর্ভাবস্থায় কোন সময়ে বরই খাওয়া উচিত নয়।

গর্ভাবস্থায় কখন বরই খাওয়া উচিত নয়?
গর্ভাবস্থায় কখন বরই খাওয়া উচিত নয় সে সম্পর্কে কোন বৈজ্ঞানিক গবেষণা নেই। এই ধরনের পরিস্থিতিতে, যখন এটি খাওয়া উচিত নয় তখন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা ভাল। আবার, যদি কোন মহিলার এটিতে অ্যালার্জি থাকে তবে তার গর্ভাবস্থায় এটি খাওয়া উচিত নয়।

আপনি কীভাবে আপনার ডায়েটে বরই অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন তা জানতে পড়ুন।

গর্ভাবস্থায় আপনার ডায়েটে বরই কীভাবে অন্তর্ভুক্ত করবেন?
বরই খাওয়ার সবচেয়ে ভালো উপায় হল এটিকে ফলের মতো খাওয়া। অথবা বরইয়ের জুস বানিয়েও খাওয়া যেতে পারে।

গর্ভাবস্থায় বরই খাওয়া উচিত কিনা তার উত্তর আমরা আগেই দিয়েছি। এটি ডায়েটে যোগ করার সময় কেবলমাত্র এর পরিমাণের কথা মাথায় রাখুন। তবে, যদি কারও বরইতে অ্যালার্জি থাকে তবে এটি সেবন করবেন না। এছাড়াও, নিয়মিত বরই খাওয়ার আগে একবার আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন।

আরো পড়ুন-

Rate this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button