ইসলাম

সূরা ফীল বাংলা উচ্চারণ সহ, অর্থ ও শানে নুযুল

সূরা আল-ফীল মাক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে। সূরা আল-ফীল কোরআন মাজিদের ১০৫ নাম্বার সূরা। এই সূরার মোট আয়াত সংখ্যা ৫ টি।

সূরা ফীল আরবি উচ্চারণ

أَلَمْ تَرَ كَيْفَ فَعَلَ رَبُّكَ بِأَصْحَٰبِ ٱلْفِيلِ
أَلَمْ يَجْعَلْ كَيْدَهُمْ فِى تَضْلِيلٍ
وَأَرْسَلَ عَلَيْهِمْ طَيْرًا أَبَابِيلَ
تَرْمِيهِم بِحِجَارَةٍ مِّن سِجِّيلٍ
فَجَعَلَهُمْ كَعَصْفٍ مَّأْكُولٍۭ

সূরা ফীল বাংলা উচ্চারণ

আলাম তারা কাইফা ফা‘আলা রাব্বুকা বিআসহা-বিল ফীল।
আলাম ইয়াজ‘আল কাইদাহুম ফী তাদলীল
ওয়া আরছালা ‘আলাইহিম তাইরান আবা-বীল।
তারমীহিম বিহিজা-রাতিম মিন ছিজ্জীল।
ফাজা‘আলাহুম কা‘আসফিম মা’কূল।

সূরা ফীল বাংলা অনুবাদ ও অর্থ

আপনি কি দেখেননি আপনার পালনকর্তা হস্তীবাহিনীর সাথে কিরূপ ব্যবহার করেছেন?
তিনি কি তাদের চক্রান্ত নস্যাৎ করে দেননি?
তিনি তাদের উপর প্রেরণ করেছেন ঝাঁকে ঝাঁকে পাখী,
যারা তাদের উপর পাথরের কংকর নিক্ষেপ করছিল।
অতঃপর তিনি তাদেরকে ভক্ষিত তৃণসদৃশ করে দেন।

সূরা ফীল এর শানে নুযূল

আবিসিনিয়ার রাজার পক্ষে আবরাহা ইয়েমেনের গভর্নর ছিলেন। তিনি সান’আ তে একটি খুব বড় গির্জা তৈরি করেছিলেন। এবং তিনি মানুষকে কাবা ত্যাগ করে এখানে পূজা ও হজ্জের জন্য আসার চেষ্টা করেছিলেন। এই কাজটি মক্কাবাসী এবং অন্যান্য আরব উপজাতিদের অপছন্দ ছিল। তাই তাদের একজন আবরাহার নির্মিত মন্দিরে পায়খানা করে দিল। আবরাহার কাছে খবর পৌঁছেছে যে কেউ গির্জাটিকে অপবিত্র করেছে। জবাবে তিনি কা’বা ধ্বংস করার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি মক্কা আক্রমণ করার জন্য একটি বিশাল বাহিনী নিয়ে রওনা হলেন। কিছু হাতিও তাদের সাথে ছিল। মক্কায় পৌঁছার পর সৈন্যরা (মক্কার প্রধান) নবীজীর দাদার উটগুলো আটক করে। এ প্রসঙ্গে আবদুল মুত্তালিব আব্রাহাকে বলেন, “আমার উটগুলো ফিরিয়ে দাও; যা তোমার সৈন্যরা ধরে রেখেছে।(আবরাহা বলল, এখন আমরা তোমাদের কা’বা ধ্বংস করতে এসেছি, আর তুমি কেবল উট ছেড়ে দেওয়ার দাবী করছ? তিনি বললেন, উটগুলি আমার। তাই আমি সেগুলির হিফাযত চাই।) বাকী থাকল কা’বা ঘরের ব্যাপার যাকে আপনি ধ্বংস করতে এসেছেন, তো সেটা হল আপনার ব্যাপার আল্লাহর সাথে। কা’বা হল আল্লাহর ঘর। তিনিই হলেন তার হিফাযতকারী। আপনি জানেন আর বায়তুল্লাহর মালিক আল্লাহ জানেন। অতঃপর যখন এই সৈন্যদল (মিনার কাছে) ‘মুহাসসার’ উপত্যকার নিকট পৌঁছল, তখন আল্লাহ তাআলা একটি পাখীর দলকে প্রেরণ করলেন যাদের ঠোঁটে এবং পায়ে পোড়া মাটির কাঁকর ছিল যা ছোলা অথবা মসুরীর দানা সমপরিমাণ ছিল। পাখীরা উপর থেকে সেই কাঁকর বর্ষণ করতে লাগল। যে সৈন্যকে এই কাঁকর লাগল সে গলে গেল, তার শরীর হতে গোশত খসে পড়ল এবং পরিশেষে তারা মারা গেল। ‘সানআ’ পৌঁছতে পৌঁছতে খোদ আবরাহারও একই পরিণাম হল। এইভাবে আল্লাহ তাআলা নিজ ঘরের হিফাযত করলেন।

সূরা ফীল এর তাফসীর

আয়াত-০১ঃ আল্লাহ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ‘আপনি কি দেখেননি? যদিও ঘটনাটি নবীর জন্মের আগে ঘটেছিল। এই ‘দেখা’ শারীরিক দেখা নয়। এখানে যা বোঝানো হয়েছে তা হ’ল ঘটনার মর্মস্পর্শী বিবরণ শোনার পরে হৃদয়ে সাক্ষী হওয়া। নবীর জন্মের সময়কার ঘটনাটি এখনও তাজা ছিল, তাই বর্ণনার সমস্ত বিবরণ অক্ষত ছিল।

‘হাতির প্রভু’ বলতে আবরাহার সেনাবাহিনীকে বোঝানো হয়েছে। এই বাহিনীতে প্রচুর সংখ্যক হাতি ছিল। আবরাহা কাবা ধ্বংস করার জন্য এই সেনাবাহিনী দ্বারা মক্কা আক্রমণ করে। সূরাটির ভূমিকা দেখুন।

আয়াত-০২ ও ০৩ঃ অলৌকিক ঘটনাটি এমন ছিল যে অগ্রসরমান সেনাবাহিনী মক্কার সীমানায় পৌঁছানোর আগেই ছোট পাখির ঝাঁক দিগন্তকে অন্ধকার করে দেয়। এই পাখিদের প্রত্যেকটি একটি ‘পাথর নুড়ি’ টুকরো বহন করছিল, যা তারা সেনাবাহিনীর উপরে একটি উঁচু জায়গা থেকে ফেলে দিয়েছিল। মাধ্যাকর্ষণ শক্তির কারণে, এমনকি ছোট হালকা পাথর বৃষ্টির ফোঁটার মত নিচে পড়ে এবং উচ্চ গতির ফলে তারা ভারী এবং ধারালো অস্ত্রের মত হয়ে যায়। এই পাথরের টুকরোগুলো দিয়ে হস্তি বাহিনীর শক্তিকে আঘাত করে। ফলে আবরাহার সমগ্র সেনাবাহিনী ধ্বংস হয়ে যায়।

আয়াত-০৪ঃ ‘সিজ্জিল’ শব্দের অর্থ পোড়া মাটির মতো শক্ত পাথরের টুকরা।

আয়াত-০৫ঃ ফসলের মাঠ থেকে ফসল তোলার পর ফসলের শিকড় মাঠে থাকে। সে সময় ফসলের মাঠ খালি ও মৃত মনে হয়। ঠিক একই উপমা দেওয়া হয়েছে আবরাহার সামন্ত প্রভুদের ব্যাপারে। কাঁকড়ার আঘাতে বিধ্বস্ত বিশাল সেনাবাহিনী ছিল মৃত এবং সেনাবাহিনী হিসেবে অকেজো। অন্যভাবে, এটি ব্যাখ্যা করা যেতে পারে যে সেনাবাহিনী ‘খড় খড় এবং গোবর’ এর মধ্যে একটি বিশেষ খড়ের মতো অনুভব করেছিল। অবশ্যই অর্থ উভয় ক্ষেত্রেই একই কিন্তু পরের ক্ষেত্রে অর্থটি আরো প্রযোজ্য।

এই সূরার মাধ্যমে প্রদত্ত সার্বজনীন উপদেশ দ্বিগুণ। সমসাময়িক মুশরিক কুরাইশদের জন্য উপদেশ ছিল যে আল্লাহ নিজেকে রক্ষা করতে সক্ষম। তারা যদি রাসুল (সাঃ) কে অত্যাচার করে, তাহলে মনে রাখবেন কাবা শুধু আল্লাহর ঘরই ছিল না, প্রিয় নবী ও রাসূল (সাঃ) – এর বন্ধুও ছিল। অতএব, নবীর অস্তিত্ব ও সম্মান কাবার চেয়ে অনেক বেশি। অতএব, আল্লাহ তাকে কুরাইশদের সকল অত্যাচার ও নিপীড়ন থেকে রক্ষা করবেন। এই সূরার সার্বজনীন উপদেশ হল: মানুষ ক্ষমতা ও সম্পদ দ্বারা নেশাগ্রস্ত এবং বিশৃঙ্খল হয়ে পড়ে; ফলস্বরূপ, তারা নিজেদেরকে এত শক্তিশালী মনে করে যে তারা আল্লাহর শক্তিকে চ্যালেঞ্জ করার সাহস করে এবং আল্লাহর সার্বজনীন পরিকল্পনাকে ব্যর্থ করার চেষ্টা করে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাদের পরিকল্পনা নষ্ট হয়ে যায়। তারা ঝড়ের মুখে আল্লাহর বিরুদ্ধে পালকের মতো উড়ে যায়।

আরো দেখুনঃ

5/5 - (11 votes)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button