স্বাস্থ্য

গমের উপকারিতা ও বিভিন্ন রোগে সেবনের নিয়ম

গম একটি খাদ্যশস্য ফসল। এটি খাড়া এবং ভেষজ প্রকৃতির একটি উদ্ভিদ। গম থেকে রুটি এবং আরও অনেক সুস্বাদু খাবার তৈরি করা হয়। গম এর ভুসি প্রাণীদের জন্য খুবই উপকারী। এছাড়াও গম রোগ নিরাময়ে ব্যবহৃত হয়।

গম কি ?

  • গম গাছের উচ্চতা ৬০-১৫০ সেমি।
  • এর কান্ড ফাঁপা এবং গিঁট রয়েছে।
  • এর পাতা লম্বা ও সরু।
  • পাতায় ডোরাকাটা দাগ রয়েছে।
  • এর ফল হলুদ, রক্তাক্ত লাল বা বাদামী রঙের।
  • এই ফলগুলি গোলাকার, স্ফীত এবং উভয় প্রান্তে চ্যাপ্টা। এর একটি অংশে রয়েছে গভীর ডোরাকাটা।
  • গম প্রোটিনের খুব ভাল উৎস, এতে ১৪.৭০ % প্রোটিন রয়েছে যা শরীরের প্রয়োজনীয় প্রোটিন গ্রহণে সহায়তা করে।
  • গম Poaceae পরিবারের একটি উদ্ভিদ । এর বোটানিকাল (বৈজ্ঞানিক) নাম হল Triticum aestivum.

কোথায় গম পাওয়া যায় এবং জন্মায়?

বাংলাদেশের প্রায় সব অঞ্চলেই গমের চাষ হয়। বিশেষ করে ডিসেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত গম চাষ করা হয়।
গম এর তিনটি জাত-

১। মহাগোধুম (এর দানা বড়) ,
২। মধুলি (এটি মহাগোধুমের চেয়ে সামান্য ছোট) এবং
৩। লম্বা গোধূম বা নন্দীমুখ (এটি কাঁটাযুক্ত অর্থাৎ এর সামনের অংশ ধারালো )।

গম যেমন একটি খাদ্য শস্য তেমনি ঔষধি গুণে সমৃদ্ধ একটি খাদ্য। এর নিয়মিত সেবন অনেক রোগ থেকে দূরে রাখে। কাশি, ব্যথা, গ্যাস, হৃদরোগ ইত্যাদিতে গম খুবই উপকারী।

গমের ব্যবহার ও উপকারিতা

গমের স্বাদ ঠান্ডা। এটি মসৃণ এবং গ্যাস ও পিত্ত নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। গম শক্তি বাড়ায়, পুষ্ট করে এবং বীর্য বাড়ায়। গম ক্ষুধা বাড়াতে সহায়ক। এটি ছোটখাটো রোগ নিরাময়ে সাহায্য করে। আসুন গমের ব্যবহার সম্পর্কিত সম্পূর্ণ তথ্য নেওয়া যাক-

কাশি নিরাময়ে-

  • গম , যব ও কাকলি ইত্যাদির মিহি গুঁড়া ২ থেকে ৪ গ্রাম দুধ , মধু ও ঘি মিশিয়ে খেলে সব ধরনের কাশিতে উপকার পাওয়া যায়।
  • ২-৪ গ্রাম গমের গুঁড়া দুধের সাথে খেলে পিত্তের ভারসাম্যহীনতার কারণে সৃষ্ট কাশিতেও খুব উপশম হয়।

বুকের ব্যথা নিরাময়ে-
বুকে ব্যথা হলে গমের ভুসি পিষে নিন। পানির সাথে মিশিয়ে হালকা গরম করে বুকে লাগান, বুকের ব্যথা তাড়াতাড়ি উপশম হবে।

হৃদরোগের চিকিৎসায়-
সমপরিমাণ গম ও অর্জুনের ছাল দিয়ে গুঁড়া তৈরি করুন। ২ থেকে ৪ গ্রাম গুড়, ঘি ও তেলে রান্না করে খেলে হৃদরোগে উপকার পাওয়া যায়। এছাড়া গরুর ঘি ও ছাগলের দুধে গমের গুঁড়া ও অর্জুনের ছাল রান্না করুন। মধু ও চিনি মিশিয়ে খেলে হৃদরোগে উপকার পাওয়া যায় ।

পেটের রোগ নিরাময়ে-
পুরানো গমের গুঁড়ো দিয়ে তৈরি খাবার মধুর সাথে খেলে পেট সংক্রান্ত সমস্যা, কোলিক ইত্যাদিতে উপকার পাওয়া যায়। বদহজম ও ক্ষুধামন্দার সমস্যায় এ ধরনের রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিকে গমের ভুসি দিয়ে রুটি বানিয়ে খাওয়ালে উপকার পাওয়া যায়।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে-
গম থেকে তৈরি খাবার নিয়মিত খেলে ব্লাড সুগার কমায়।

কিডনি স্টোন নিরাময়ে –
ছোট মূত্রাশয় পাথরের চিকিৎসার জন্য গমের ঘাস ব্যবহার করা যেতে পারে। গম এবং ছোলার একটি ক্বাথ তৈরি করুন। .১৫-২০ মিলি পরিমাণে দিলে কিডনি ও মূত্রথলির ছোট পাথর দ্রবীভূত হয়।

অণ্ডকোষ সংক্রান্ত সমস্যায়-
অণ্ডকোষ বড় হয়ে যাওয়ায় ব্যথা হলে তার রোগ নির্ণয়ের জন্য ভেড়ার দুধ খান। এর মধ্যে গমের গুঁড়া ও কুন্ডরু গরম করুন। এটি অণ্ডকোষে লাগালে ব্যথা দ্রুত উপশম হয়।

যোনি সমস্যা নিরাময়ে-
যোনি চুলকানি, পিণ্ড ইত্যাদির ক্ষেত্রে গমের আটা ও রেভটিকা দ্রবণ ব্যবহার করতে হবে। এই পেস্টটি যোনিপথে লাগালে এই সমস্যায় উপকার পাওয়া যায়।

গাউট চিকিৎসায়-

ছাগলের দুধ ও ঘি এর সাথে গমের গুঁড়ো মিশিয়ে পেস্ট আকারে আর্থ্রাইটিস বা জয়েন্টের ব্যথায় লাগান। গাউটে এটি উপকারী।

হাড় ভাঙার চিকিৎসায়-
যাদের হাড় ভেঙে গেছে তারা সমপরিমাণ হাড়ের শিকল (হাদজোদ), লাখ, গম ও অর্জুনের ছাল মিশিয়ে নিন । ৫-১০ গ্রাম এই গুঁড়ো ঘি এর সাথে মিশিয়ে বা রান্না করার পর দুধ পান করলে উপকার পাওয়া যায়।

কুষ্ঠ রোগের চিকিৎসায়-
অনেক ধরনের গম জাতীয় খাবার খেলে কুষ্ঠ রোগে উপকার পাওয়া যায়।

ক্ষত নিরাময়ে-
মটর, কলে, মসুর ডাল , গম এবং নির্গুন্ডি বীজের মিশ্রণ ক্ষত সারাতে সহায়ক। এই মিশ্রণটি পিষে ক্ষতস্থানে লাগালে ক্ষতের ব্যথা তাড়াতাড়ি শেষ হয়।

চর্মরোগের চিকিৎসায়
চর্মরোগে গমের ভুসি খুবই উপকারী। এক কোয়ার্ট (ক্বাথ) তুষ তৈরি করুন, এটি ঠান্ডা করুন এবং এটি গোসল এর পানিতেমিশ্রিত করুন। এই পানি দিয়ে গোসল করলে চর্মরোগে উপকার পাওয়া যায়। এটি ত্বকের দুর্গন্ধ দূর করে।
দাদ, খোসপাঁচড়া বা চুলকানিতে আক্রান্ত অংশে গমের আটা লাগালে ধীরে ধীরে চুলকানি দূর হয়

রক্ত ​​পরিশোধনে-
গমের বীজ রক্ত ​​পরিষ্কার করার জন্য ব্যবহার করা হয় কারণ গবেষণা অনুসারে গমের বীজে রয়েছে রক্ত ​​বিশুদ্ধকারীর গুণ, যা রক্ত ​​পরিশোধন করে রক্ত ​​সংক্রান্ত সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।

গম সেবন রক্তস্বল্পতার সমস্যা দূর করতে উপকারী, কারণ গমে প্রচুর পরিমাণে আয়রন রয়েছে, যা হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি দূর করে রক্তশূন্যতার অবস্থার উন্নতি করতে সাহায্য করে।

গমের আটা খাওয়া উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।

পাচনতন্ত্রকে শক্তিশালী করতে-
গম খাওয়া পাচনতন্ত্রকে শক্তিশালী করতে সহায়ক এবং এর রেচক বৈশিষ্ট্যের কারণে এটি পেট পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে।

কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি পেতে-
গমের আটার ব্যবহার, বিশেষ করে ভুসিযুক্ত ময়দা খাওয়া কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, কারণ এতে রয়েছে রেচকের বৈশিষ্ট্য।

স্মৃতি শক্তি বৃদ্ধিতে-
গমের সেবন স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে, কারণ গমের মধ্যে পাওয়া পুষ্টিগুণ মস্তিষ্ককে পুষ্ট করে এর সক্রিয়তা বজায় রাখতে সাহায্য করে।

দুর্বলতা থেকে মুক্তি পেতে-
গমের জোয়ারের রস শারীরিক দুর্বলতা দূর করার জন্য একটি ভালো প্রতিকার, কারণ জোয়ারের রসে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি উপাদান পাওয়া যায়, যা শারীরিক দুর্বলতা দূর করতে সহায়ক।

আগুনে পোড়া গমের উপকারিতা
আগুনে পোড়া জায়গায় গমের আটা লাগালে (গেহু) পোড়ার কারণে ব্যথা, ফোলাভাব ও প্রদাহ দূর হয়। গমের আটার পেস্ট লাগালে চুলকানি, জ্বালাপোড়া ও ব্রণ নিরাময় হয়।

ক্যান্সারের চিকিৎসায়-
গমের পাতার রস খুব উপকারী। এটি অনেক রোগে উপকারী। বিশেষ করে, এটি ক্যান্সার, ডায়াবেটিস এবং জ্বরে বেশি কার্যকর। গমের রস বের করে ১৫ মিলি গিলয়ের রস, ৫ মিলি নিম পাতার রস এবং ৫ মিলি তুলসী পাতার রস মিশিয়ে নিন । এটি পান করলে এসব রোগে খুব দ্রুত উপকার পাওয়া যায়।

পুরুষত্বহীনতা বৃদ্ধিতে-
সেক্স স্ট্যামিনা বাড়াতে গম সহায়ক। এর জন্য কেভাঞ্চের বীজ এবং গম দুধে রান্না করুন। ঠাণ্ডা করে তাতে ঘি মিশিয়ে পান করলে যৌনশক্তি বৃদ্ধি পায় এবং সন্তান ধারণের সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

গমের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

সাধারণত, গম থেকে তৈরি ওষুধ ব্যবহার সম্পর্কে কোন ক্ষতি সম্পর্কে জানা যায় না। তারপরও ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

আরো পড়ুনঃ

5/5 - (16 votes)

Nusrat Popy

Hi, I’m Nusrat Popy, a content writer at Shopnik with a passion for all things health, beauty, and technology. I love exploring how small changes—whether in skincare, daily wellness, or smart tech—can make a big difference in our lives. Through my writing, I aim to inspire, inform, and empower readers to live their best lives with confidence and curiosity.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button