হেয়ার স্টাইল

চকচকে চুল পেতে মধু দিয়ে চুলের যত্ন নিন এইভাবে

চুলের শুষ্কতার সমস্যা থাকলে, আপনার চুলের যত্নের রুটিনে বিশেষজ্ঞদের দেওয়া টিপস অন্তর্ভুক্ত করুন যা আমার লেখা বিভিন্ন পোস্টে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেছি।

শীত মৌসুমে বয়ে যাওয়া ঠান্ডা বাতাস ত্বক ও চুল উভয়ের ওপরই প্রভাব ফেলে। সাধারণত, লোকেরা তাদের ত্বকের প্রতি যতটা মনোযোগ দেয়, তারা তাদের চুলের যত্ন নিতে ততটা সক্ষম হয় না। শীতের মৌসুমে চুল শুষ্ক ও প্রাণহীন হয়ে পড়ে। অনেক সময় চুলে খুশকির সমস্যাও বেড়ে যায়, তখন অনেক নারীই চুল ভেঙে যাওয়ার অভিযোগ করেন। কিছু চরম ক্ষেত্রে, চুল ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং ভাঙ্গা এবং পড়া শুরু করে।

স্পষ্টতই, কেউ তাদের চুলের সর্বনাশ দেখতে রাজি না। বিশেষ করে মহিলারা তাদের চুলকে খুব ভালোবাসে এবং তারা কখনই তাদের চুল নষ্ট হতে দেখতে চায় না। এজন্য তারা বাজারে আসা চুলের যত্নের অনেক পণ্য ব্যবহার করতে শুরু করেন। বাজারে পাওয়া দামি চুলের যত্নের পণ্যগুলি অবশ্যই আপনাকে তাৎক্ষণিক ফলাফল দেয়, তবে তাদের প্রভাব স্থায়ী নয়। আপনি এগুলি ব্যবহার করা বন্ধ করলে আপনার চুল আগের অবস্থায় ফিরে আসবে। সেজন্য আপনার মনোযোগ প্রাকৃতিক প্রতিকারের দিকে ফোকাস করা উচিৎ। বিশেষ করে চুলে মধু ব্যবহার করুন। এটি শুধুমাত্র আপনার চুলে উজ্জ্বলতা বাড়াবে না বরং আপনার চুলের অন্যান্য সমস্যাও দূর করবে।

চুলে মধু কীভাবে ব্যবহার করা উচিৎ তা নিয়ে আমরা বিউটি এক্সপার্টদের সঙ্গে বিস্তারিত আলাপ করেছি। তাদের মতে, “মধু একটি প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজার। মধু যেমন ত্বকের জন্য খুবই উপকারী, তেমনি এটি চুলের জন্যও অনেক উপকারী। আসলে, চুলের সমস্ত সমস্যা মাথার ত্বকের সাথে সম্পর্কিত। মধু মাথার ত্বকের স্বাস্থ্যের উন্নতিতে সাহায্য করে। শীতের মৌসুমে মুখের ত্বক যেমন শুষ্ক হয়ে যায়, ঠিক তেমনি মাথার ত্বকেও ফাটা ত্বকের সমস্যা দেখা দেয়। শুধু তাই নয়, শীতের মৌসুমে খুশকির সমস্যাও খুব সাধারণ। এমন পরিস্থিতিতে সুন্দর ও চকচকে চুল পেতে মধু দিয়ে চুলের যত্ন নিন এইভাবে।

মধু দিয়ে চুলের যত্ন

মধুতে নিম্নলিখিত পুষ্টিগুণ পাওয়া যায়, যা চুলের যত্নে খুবই উপকারী

  • মধুতে রয়েছে ইমোলিয়েন্ট, যা মাথার ত্বকের রুক্ষ ত্বককে মসৃণ করে।
  • মধুতে রয়েছে হিউমেক্ট্যান্ট, যা মাথার ত্বকে আর্দ্রতা ধরে রাখে।
  • মধুতে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল গুণ রয়েছে।
  • মধু অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ।
  • মধু হল অ্যান্টিফাঙ্গাল।

চুলে মধু ব্যবহারের সহজ উপায়

চুলের জন্য মধুর উপকারিতাঃ চুলের জন্য মধুর অনেক উপকারিতা রয়েছে। NCBI (ন্যাশনাল সেন্টার ফর বায়োটেকনোলজি ইনফরমেশন) এর গবেষণায় প্রমাণিত হয় যে, মধু একটি ওষুধ এবং চুলের খুশকির সমস্যা কমাতে সহায়ক। এ ছাড়া চুলের ভালো বৃদ্ধির জন্যও মধু ব্যবহার করা যেতে পারে। মধুর অন্যান্য উপকারিতাও জানালেন বিউটি এক্সপার্টরাঃ

মাথার ত্বকে আর্দ্রতা কম থাকলে তা সরাসরি চুলের ফলিকলকে প্রভাবিত করে। চুল দুর্বল হয়ে পড়ে এবং ভাঙতে শুরু করে। তাদের মতে, ‘কখনও কখনও মাথার ত্বকের এক জায়গায় এত চুল ভেঙে যায় যে প্যাচ তৈরি হয়। এটাকে টাকের সমস্যাও বলা যেতে পারে। এক্ষেত্রে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ মধু চুলে লাগাতে পারেন।

মাথার ত্বকের পিএইচ ভারসাম্যও মধুর দ্বারা বজায় থাকে। এটি চুলের গোড়া থেকে মজবুত করে এবং মাথার ত্বকের স্বাস্থ্য বজায় রাখে। এর অ্যান্টিফাঙ্গাল এবং অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্যের কারণে মধু লাগালে মাথার ত্বকে খুশকির সমস্যাও কমে যায়। মধুর সঙ্গে কয়েক ফোঁটা লেবুর রস মিশিয়ে লাগালে খুশকির সমস্যা দ্রুত উপশম হয়।

বিভক্ত চুল এবং ক্ষতিগ্রস্থ চুলও মধু লাগালে মেরামত হয়। মধুতে প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজার থাকায় চুলের শুষ্কতাও চলে যায়।

মধু দিয়ে কীভাবে চুলের চিকিৎসা করবেন

মধু এবং গোলাপ জল হেয়ারমাস্ক

উপাদানঃ

  • 3 টেবিল চামচ মধু
  • 5 টেবিল চামচ গোলাপ জল

পদ্ধতিঃ মধু ও গোলাপ জল মিশিয়ে স্প্রে বোতলে ভরে নিন। তারপর এই মিশ্রণটি মাথার ত্বকে লাগিয়ে স্ক্যাল্পে ৫ মিনিট ম্যাসাজ করুন। এরপর স্বাভাবিক পানি দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন।

উপকারিতাঃ এই হেয়ার প্যাকটি শুষ্ক চুলের জন্য উপকারী হবে।

দই এবং মধুর হেয়ারমাস্ক

উপাদানঃ

  • 1 বাটি টক দই
  • 3 টেবিল চামচ মধু

পদ্ধতিঃ দই ও মধু মিশিয়ে চুলের গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত লাগান। ৩০ থেকে ৪৫ মিনিট পর পানি দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে একবার এই হেয়ার মাস্ক চুলে লাগান।

উপকারিতাঃ খুশকির সমস্যা থাকলে এই হেয়ার প্যাকটি আপনার উপকারে আসবে।

ডিম, মধু এবং অ্যালোভেরা জেল হেয়ারমাস্ক

উপাদানঃ

  • 1টি ডিম
  • 3 টেবিল চামচ মধু
  • 1 টেবিল চামচ অ্যালোভেরা জেল

পদ্ধতিঃ একটি পাত্রে ডিম, মধু এবং অ্যালোভেরা জেল মিশিয়ে নিন। তারপর এই মিশ্রণটি মাথার ত্বকে এবং চুলের দৈর্ঘ্যে লাগান। এটি চুলে 30 থেকে 45 মিনিটের জন্য রেখে দিন। এরপর স্বাভাবিক পানি দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলতে হবে। এই হেয়ার প্যাকের পর সালফেট ফ্রি শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলতে পারেন।

উপকারিতাঃ এই হেয়ার মাস্ক চুলে প্রোটিন ট্রিটমেন্ট দেওয়ার জন্য ভালো।

আপেল সিডার ভিনেগার এবং মধুর হেয়ারমাস্ক

উপাদানঃ

1 টেবিল চামচ আপেল সিডার ভিনেগার
1 টেবিল চামচ মধু

পদ্ধতিঃ মধু এবং ভিনেগার মিশিয়ে মাথার ত্বকে লাগান। ৪৫ মিনিট পর চুল ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে একবার এই হেয়ার মাস্ক লাগাতে ভুলবেন না ।

উপকারিতাঃ মাথার ত্বক গভীরভাবে পরিষ্কার করার জন্য এই হেয়ার মাস্কটি খুবই ভালো।

মেয়োনিজ এবং মধুর হেয়ারমাস্ক

উপাদানঃ

  • 1 টেবিল চামচ মেয়োনিজ
  • 1 টেবিল চামচ মধু

পদ্ধতিঃ মেয়োনিজ ও মধু মিশিয়ে চুলের গোড়া ও দৈর্ঘ্যে লাগান। ৪৫ মিনিট পর শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন।

উপকারিতাঃ এই হেয়ার প্যাক চুলের শুষ্কতা দূর করে।

চুলে মধু লাগানোর সময় সতর্কতা

চুল গরম করার পর কখনোই চুলে মধু লাগাবেন না।
এমনকি যদি আপনার মাথার ত্বকে কোনো ধরনের অ্যালার্জি থাকে, তবে আপনার মধু প্রয়োগ করা এড়ানো উচিৎ।
সারারাত চুলে কখনো মধু রাখবেন না।

দ্রষ্টব্যঃ আমরা এমন কোনো দাবি করছি না যে মধু লাগালে চুলে তাৎক্ষণিক উপকার পাওয়া যাবে, তবে ধীরে ধীরে আপনি অবশ্যই এর ভালো ফল দেখতে পাবেন। যদি আপনার চুল খুব বেশি পড়ে, তাহলে আপনার স্বাস্থ্য সমস্যা হতে পারে। এই বিষয়ে আপনার চুল বিশেষজ্ঞের সাথে কথা বলুন এবং শুধুমাত্র তারপর উপরে উল্লিখিত হেয়ার প্যাকগুলি ব্যবহার করুন।

আরো পড়ুনঃ

4.9/5 - (16 votes)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button